সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কলো ছোবল

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ।  শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের এই মাটি সম্প্রীতি পূণ্য ভুমি হিসেবে পরিচিত।  এই মাটিতেই মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একই ঘাটের পানি খেয়ে বড় হচ্ছে। আজো বাংলাদেশে মুসলমানের কবর স্হানের জন্য হিন্দু আর হিন্দুর মন্দিরের জন্য মুসলমান জমি দান। হিন্দুর শবদেহ মুসলমানের কাঁধে চরে চিতায় যায় মুসলমানের লাশ হিন্দুর কাঁধে চেপে ও গোরস্থানে যাওয়ার নজির কম নয়। হঠাৎ করেই অনেক সময় আমাদের এই মাটি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কলংকিত হয় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের কালো থাবায়। ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এমন ঘটনা যা কোন ভাবেই কাম্য নয় এমন কি আমাদের সম্প্রীতির সাথে মানায় না। গত ১৮ই এপ্রিল এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে ফরিদপুরের  মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে। যদি ও গ্রামটির নাম কৃষ্ণনগর তবে আশে পাশের মোট পাঁচটি গ্রাম নিয়েই মুলত এই এলাকার পরিচিত পঞ্চপল্লী গ্রাম নামেই।  পঞ্চপল্লীর গ্রাম গুলি হলো কৃষ্ণনগর, শিধলাজুড়ী, তারাপুর, জাননগর, কেষ্টপুর। এই পঞ্চপল্লী গ্রামের সকল বাসিন্দা ই সনাতন ধর্মাবলম্বী। এই পঞ্চপল্লী গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত এক মাস যাবৎ বিদ্যালয় কমপ্লেক্সে একটি শৌচাগার নির্মানের কাজ চলছিল যেখানে মধুখালির ই  দুরের গ্রাম থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছিলেন যারা সকলেই ছিলেন ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম। তারা ঐ বিদ্যালয়ের ভিতরে একটি কক্ষে থেকেই কাজ করছিলেন। বিদ্যালয়ের পাশে ঘেঁষেই বটতলায়  বারোয়ারি কালী মন্দির। মন্দিরের ভিতরে উপাসনার জন্য কালী ও শিব মূর্তি সহ আরো দুটি মূর্তি আছে।  প্রতিদিনের মত ১৮ এপ্রিলও মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে আসেন মন্দিরের পাশের বাড়ীর তপতী রানী মণ্ডল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭টার দিকে মন্দিরের ভিতরে থাকা দেবী কালীর মূর্তির পরনে থাকা শাড়ীর আচঁলে আগুল লেগে যায়। মুহুর্তেই আগুনে কালী মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা তীরশূল পুড়ে যায়। তপতী রানী মণ্ডল মন্দিরে প্রতিদিন যে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান তা দেবী কালীর মূর্তির হাত খানেক সামনেই।  বৈশাখের আবহাওয়া তাই ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাহিরে কিছুটা বাতাস ও ছিল। মন্দিরে আগুন দেখে মুসলিম শ্রমিক ও পাশের হিন্দু বাড়ীর লোকজনে আগুন আগুন চিৎকারের আশপাশের শত শত লোক আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন। উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরে থাকা দেবী কালীর মূর্তির  পরনের শাড়ী ও হাতে তীরশূল পোড়া দেখে উত্তেজিত হয়ে পরেন। নিঃসন্দেহে একজন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ যখন তার উপাসনালয়ে উপাস্য দেবী মূর্তির এমন অবস্থা দেখবেন তাতে উত্তেজিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। একে একে পঞ্চপল্লীর পাঁচ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ই ছুটে আসেন মন্দিরে। আর এই ধর্মীয় উত্তেজনাকে কাজে লাগায় কিছু স্বার্থান্বেষী ধর্মীয় উগ্রবাদী। তারা উত্তেজিত জনতার মাথায় ঢুকিয়ে দেয় মন্দিরে আগুন দেওয়ার কাজটা পাশের বিদ্যালয়ের মুসলিম নির্মাণ শ্রমিকরা ই করেছে। তাতে উত্তেজিত জনতা মারধরের উদ্দেশ্যে ঘিরে ফেলেন উপস্থিত মুসলিম নির্মাণ শ্রমিকদের। এরই মধ্যে সাব ঠিকাদার জলিল শেখ নির্মাণ কাজের জন্য রড নিয়ে নিসমন নামের স্হানীয় যন্ত্রযান নিয়ে উপস্থিত হন।  উত্তেজিত স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগন নসিমনে থাকা রশি দিয়ে সাব ঠিকাদার জলিল শেখ নসিমন চালক লিটন খান ও নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল, আরশাদুল, সিরাজ শেখ, আনোয়ার হোসেনকে বেঁধে ফেলেন। স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার সরকার ইউপি সদস্য লিংকন বিশ্বাস ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ আসাদুজ্জামান তপনের উপস্থিতিতেই স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগন নির্মাণ শ্রমিক সাব ঠিকাদার ও নসিমন চালকের উপর হামলা শুরু করে। এক পর্যায়ে স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ই কিছু উগ্রবাদীরা এতটাই ক্ষেপিয়ে তোলেন যে তারা রশি দিয়ে বাঁধা মুসলিন নির্মাণ শ্রমিক,  সাব ঠিকাদার ও নসিমন চালকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার জন্য উদ্বুদ্ধ হন। এই ঘটনায় উগ্র হিন্দু সাম্প্রতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণে জীবন হারাতে হয় আশরাফুল খান (১৭) ও আরশাদুল খানকে (১৫) নামের দুই কিশোর মুসলিম সহোদর নির্মাণ শ্রমিকে আর অত্যন্ত মারাত্মক ভাবে আহত হন বাকীরা। মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে এতটাই ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল যে স্হানীয় মধুখালি থানার পুলিশ উপস্থিত হলেও তারা আক্রান্ত মুসলিম শ্রমিকদের উদ্ধারের পরিবর্তে নিজেদের ও জিম্মি দশার মধ্যে পরতে হয় স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগনের কাছে।  পরে আশেপাশে থানার পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দীর্ঘ সাত ঘন্টায় কয়েকশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে  পঞ্চপল্লী এলাকার উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে ও ঐখান থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করতে সমর্থ হন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ওখান হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলি এতটাই অমানবিক হয়ে গিয়েছিল যে তারা দুইজন মাসুম নাবালকে পিটিয়ে মেরে উল্লাস করছিল।  তাদের বুক একটু ও কাঁপলো না যে পেটের দায়ে কাজ করতে আসা দুইটি শিশু বাচ্চারা তো আর ধর্মবিদ্বেষ কি তা হয়তো বুঝে না। বিদ্যালয়ে অবস্থানরত মুসলিম শ্রমিকরা নিশ্চয়ই অবগত যে তারা যেখানে আছেন সেটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা এখানে কোন উদ্দেশ্যে তারা মন্দিরে প্রতিমার গায়ে আগুন দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন?  তারা অবশ্যই বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মন্দিরে প্রতিমার গায়ে আগুন দেওয়া বা ওখানে কোন অন্যায়ের ব্যবস্হা সম্পর্কে কিছুটা হলে ও ধারনা ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই ঘটনার পর পর ই এক শ্রেনীর হিন্দু উগ্রবাদী গোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা লিপ্ত হয়েছিলেন । এর আগেও গত ১৯ ফেব্রুয়ারী চট্রগ্রাম আদালত চত্বরে হিন্দু ধর্ম ছেড়ে নও মুসলিম এক তরুণকে বিয়ের জের ধরে যে উস্কানিমূলক স্লোগান শুনেছি তা সত্যি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জন্য এক ভয়ংকর শকুনের ই কালো ছায়া।

আমি আগেই বলেছি আমরা বাংলাদেশের মানুষ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আর এই চেতনাকে বিশেষ পূঁজি করে আমাদের অগ্রজের ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্র আমাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।  আমরা কখনোই চাইনা তাদের ত্যাগে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি কখনোই সাম্প্রদায়িক শকুনের থাবায় ছিন্নভিন্ন হউক।  কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই কিছু;দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি আমাদের সোনার বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ বাঁচিয়ে রাখার পায়তারায় ব্যস্ত।  এমনকি তারা অনেকটা স্বার্থক ও হয়েছে। তার কিছু প্রমান ও  আমরা দেখেছি। স্বাধীনতার পর থেকেই ঐ অপশক্তি গুলি সক্রিয়। তারা কোন না কোন ছুতো তুলে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের পায়তারায় ব্যস্ত। ভারতের অযোধ্যাতে বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে ১৯৮৯ ও ৯০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এক শ্রেনীর মুসলিম উগ্রবাদী গোষ্ঠী ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘড় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও মন্দিরে  হামলা চালিয়ে দেশকে এক অরাজক পরিস্থিতি দিকে ঠেলে দিতে চেয়ে ছিল।  এর পর একে একে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে কখনো ফেইসবুকে ধর্ম অবমানর ধোয়া তুলে কখনো মন্দিরে পবিত্র কোরান শরীফ রাখার কথা বলে।  তার প্রমান রামু,  নাসির নগর,  কুমিল্লা, পাবনার সাথিয়া সহ অনেক এলাকাই। এমনকি কখনো কখনো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ও আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও হামলার ঘটনার ঘটেছে।  তবে দুঃখ জনক হলেও সত্যি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কোন সাম্প্রদায়িক অঘটনের সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার আজ ও পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।  যাও দুয়েকটা হয়েছে তা সবই শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের জন্য।  সব সময়ই ই সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা ও মূল হোতারা রয়ে গেছেন ধরা ছোয়ার বাহিরে। নাসির নগরের রসরাজ দাস ফেইসবুকের ব্যবহার না জানলেও নাসিরে নগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর হামলা হয় ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে। কুমিল্লার পুজা মণ্ডপে পবিত্র কোরান শরীফ রাখার অভিযোগ এনে কুমিল্লা, চাঁদপুর,  রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর হামলা হয় ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে এমন কি আমরা দেখলাম মধুখালির ঘটনার পর সেই ফেইসবুক উস্কানি যা আমি আগেই বলেছি। আমি আগেই বলেছি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য দেশীয়৷ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি ইন্ধন পুরনো কখনো আমরা একটি গোষ্ঠীর কাছ থেকে স্লোগান  শুনিছি ” আমরা হব তালিবান, বাংলা হবে আফগান “।  আবার কখনো কখনো একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ” অখণ্ড ভারত ” করার শপথ নিতে ও দেখেছি।  কিন্তু কোন এক অজানা কারনে এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আজো বাংলাদেশের মাটিতে বুক ফুলিয়ে অহংকারে সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলে যাচ্ছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে কোন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির জায়গা হতে পারে না বা হতে দেওয়া যাবে না।

নিরাপদ বাংলাদেশ আর কত দুর??

একজন নারীর কাছে জীবনের চেয়ে ও সম্ভ্রম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় ই শুনে থাকি জীবনের বিনিময়ে সম্ভ্রম রক্ষার কাহিনী। এত ঘটনার পর ও কি আমাদের নারীদের সম্ভ্রমের নিরাপত্তা জীবনের নিরাপত্তা আমরা অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্র দিতে পেরেছে ? আমাদের রাষ্ট্র কি আজো আমাদের নারীদের জন্য নিরাপদ? উত্তরটা এক শব্দেই আসবে ” না “। কর্ম থেকে পরিবার প্রায় সব জায়গাই ই আমাদের নারী নানান বৈষম্য নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার। এসব ঘটনার হয়তো বিন্দু মাত্র চিত্র আমরা জানি বা জানতে পারি। যদি সেই সকল ঘটনা আলেচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। মাত্র কয়েক দিন আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহার একটি অশ্লীল অডিও ক্লিপ সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো। তিনি হরহামেশাই নারী সহকর্মীদের সঙ্গে কর্মস্থলে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। যা অধস্তনদের বিব্রত করে। এর আগে জামালপুর- ৪ আসনের সাংসদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ও চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহীর ফোন আলাপ আমারা শুনে অনেকটাই হতভম্ব হয়েছি। সেই সাথে মুরাদ হাসানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যরিষ্টার জাইমা রহমান কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও আমাদের কম লজ্জিত করে নাই। হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। অথচ আমাদের সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অভিভাবক তুল্য। আর আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্হায় নারীর প্রতি এহন ঘৃন্য মনোভাবাপন্ন আচরন নতুন কিছুই নয়। গত ২২ ডিসেম্বর সাগর কন্যা কক্সবাজারের ঘটে গেল এক অমানুষিক কান্ড। কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা এক নারীকে গনধর্ষণ করেন কক্সবাজারের ই কিছু স্হায়ী সন্ত্রাসী। ঐ ঘটনার মুল হোতা মো. আশিক ও তার সহযোগী হিসেবে ছিল তার সন্ত্রাসী গ্রুপের আরো কয়েক জন যার মধ্যে একজন ছিলেন স্হানীয় জিয়া গেস্ট হাউজ নামের একটি হোটেলের ম্যানেজার। ঘটনার দিন স্থানীয় আশিকুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা ধর্ষণের শিকার ঐ মহিলা ও তার স্বামীর সাথে এক ধরনের পায়ে পারাদিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে তার পর সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে তাকে তার আট মাসের শিশু সন্তান ও স্বামীকে অপহরন করে। পরে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে ও কলাতলী জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে তাঁকে দুই দফা ধর্ষণ করেন। তবে কষ্ট ও বেদনার বিষয় হল ঘটনার পর পথচারী একজনের সহযোগিতায় ঐ নারী জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ও নাকি কেন সহযোগিতা পান নাই। এমন কি স্হানীয় পুলিশ ঘটনার বিস্তারিত জানার পর ভিক্টিম মহিলাকে থানায় গিয়ে সাধারন ডায়েরি করার কথিত উপদেশ দেন। এর পর ঐ ভদ্র মহিলা স্হানীয় র‍্যাব অফিসে ফোন করে ঘটনা জানালে র‍্যাব এসে তাকে উদ্ধার করেন এবং মামলা করার ব্যবস্হা করেন। পরে আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশের যেই বক্তব্য ও ভুমিকা দেখেছি তা সত্যি কথা বলতে কি আমার কাছে মনে হয়েছে অপরাধীদের রক্ষায় ট্যুরিষ্ট পুলিশ বিশেষ ভুমিকা পালন করতে চাচ্ছিলেন। যদি ও শেষে পর্যন্ত মাদারীপুর থেকে ধর্ষণ মামলার মুলহোতা আশিককে গ্রেফতার করতে স্বার্থক হয় র‍্যাব। গ্রেফতারের পর আশিকের বরাত দিয়ে র‍্যাবের মুখপাত্র যে সকল তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তা সত্যি ভয়ানক এবং দুঃখ জনক। সংবাদমাধ্যমের খবরে কক্সবাজের ট্যুরিষ্ট পুলিশের ভাষ্য অনু্যায়ী বিভিন্ন ভাবে ধর্ষনের শিকার নারী ও তার স্বামীকে অপরাধী প্রামনের চেস্টায় লিপ্ত ছিলেন তারা বরাবরই বলে আসছিলেন ঐ নারী তিন মাস যাবৎ কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে বিভিন্ন নামে অবস্হান করছেন! এবং অপরাধীরা ঐ নারীর পুর্ব পরিচিত। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য অনুযায়ী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত আট মাসের শিশুর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে স্বামী-সন্তানসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যান ওই নারী। পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ জোগানোর বিষয়টি জেনে তাঁদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন গ্রেপ্তার আশিক ও তাঁর সহযোগীরা। এ অর্থ না দেওয়ায় ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। তিনি আরো জানায়, ওই নারী আশিকের পূর্বপরিচিত ছিলেন না। ঘটনার এক দিন আগে সৈকতে তাঁদের পরিচয় হয় যখন আশিক তাদের কাছে চাঁদা দাবী করে। সন্তানের চিকিৎসার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে আশিকদের নজরে পড়েন ওই নারী।২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন আশিক। তাঁর নামে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা আছে। পাঁচবার পুলিশ আশিককে গ্রেপ্তার করেছে। আশিকের নেতৃত্বে চক্রটি পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আশিক বিভিন্ন হোটেলে ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে যোগসাজশে পর্যটকদের বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন। এক পুলিশ সদস্যকেও ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করেন আশিক। বহুল পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ বাংলা২৪ এর তথ্যমতে, আশিকের চক্রটির আশ্রয়দাতা হিসেবে আছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। এ ছাড়া কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেও এই চক্রের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশিকের বাহিনী। আর আশিকের ফেইসবুক প্রোফাইলে ও এর প্রমান মিলে। কিন্তু হতাশার বিষয় কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশের ভাষ্য আর র‌্যাবেরসম্পুর্ন বিপরীত মুখী ভাষ্য।

ধরে নিলাম কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামীকে যে ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন তা সত্যি। ধরে নিলাম ধর্ষিতা মহিলা একজন পতিতা মাদক কারবারি তার স্বামী ও একজন পতিতার দালাল ও মাদক কারবারি। তার পর ও ১৭ মামলার আসামী চিহ্নিত সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কিভাবে কক্সবাজারের মত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের একটি জনবহুল এলাকা থেকে তাদের অপহরন করে। তার পর আবার ঝাউতলার মত জায়গার ঝুপড়ি দোকানের পিছনে নিয়ে একবার গন ধর্ষন করে পরবর্তীতে একটি গেষ্ট হাউজে। কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশ ভিকটিম সম্পর্কে যেই ধরনের তথ‍্য উপস্হাপনের চেষ্টা করেছেন তা শুধু ন‍্যায় বিচারের পরিপন্থীই নয় বরং অপরাধীদের রক্ষার পদক্ষেপ ও বটে। আর আমাদের বেশ কিছু গণমাধ্যম তাদের বিবেক বিবেচনা না খাটিয়ে সঠিক অনুসন্ধান না করে শুধু পুলিশের ভাষ্যমতে ভিকটিমকে পতিতা অথবা চোরাকারবারি এবং তার স্বামীকে একজন পতিতার দালাল ও মাদক কারবারি প্রমানের একধরনের মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করেছিল যা সত্যি লজ্জাস্কর ব্যাপার।

কক্সবাজের ঘটনা আমাদের জন্য একটি সামান্য উদাহরন মাত্র। প্রতিনিয়ত ই আমাদের নারীররা কোথাও না কোথাও নানান ভাবে হেনস্থার শিকার। বেশির ভাগ সময় ই লোকলজ্জাকে ভয় করে তারা এটাকে ছাপিয়ে যান। যা আমাদের কাছে এক অজানা অধ্যায় হিসেবে ই রয়ে যায়। আমাদের সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নারীদের রক্ষা করতে বা নিরাপদ রাখতে যে ব্যর্থ তারও প্রমান কক্সবাজারের ঘটনাই নয় প্রতিদিন ই এমন ঘটনা ঘটছে। তার কিঞ্চিৎ ই জনসম্মুখে আসে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বীচ ম্যানেজমেট কমিটি নারী ও শিশুদের জন্য বীচের ধারে সংরক্ষিত এলাকা করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন যা সত্যি সবাকে অবাক করেছে। যদিও পরে তোপের মুখে সেই জ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত থেকে দুরে সরে এসেছে প্রশাসন। পরিবার পরিজন নিয়ে সকলেই বেড়াতে যান একান্তে তাদের সাথে সময় কাটাতে। আর কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া মানেই সাগর ও সৈকতকে উপভোগ করা সাগরের নোনা জল আর বালির সাথে পরিবারের সকলকে নিয়ে মিতালি করা। আর সেখনে যদি নিরাপত্তার নামে সংরক্ষিত এলাকা করে পারিবারিক আনন্দে দেওয়া দেওয়া হয়। তা হলে এর অর্থ কি দাড়ায়? প্রথমত পর্যটকদের কক্সবাজার আসতে নিরুৎসাহিত করা আর সেই সাথে স্হানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যটদের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্হায় ব্যর্থ। কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষন নতুন কিছুই নয়।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রথম ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১৯৮৭ সালে। প্রকাশ্য বিচে এক বিদেশি পর্যটককে ধর্ষণ করে কয়েকজন বখাটে। ওই ঘটনায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ২০০৫ সালেও কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে এক বিদেশি পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় ধর্ষক গ্রেফতার হয়। এরপর ২০১৯ সালের কক্সবাজারে “গুড ভাইব কটেজ” নামের একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলীয় এক নারী পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন ঐ রিসোর্টের দুই কর্মচারী কতৃক। যদিও পরে ঐ ধর্ষকদের গ্রেফতার করা হয়।

ইতোমধ্যে অনেক নেটিজেন ই তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দেওয়ালে বিশেষ করে ফেইসবুকের দেওয়া ” কক্সবাজার বয়কট ” এর আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করছেন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন কক্সবাজার কাদের সম্পদ? পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ” কক্সবাজার ” আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সম্পদ রাজনৈতিক মদদপুষ্ট কিছু বিপদগামী সন্ত্রাসীর নানান অপকর্ম প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খামখেয়ালী পনার জন্য তো আমারা আমাদের নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করতে পারিনা। তাই যারা ” কক্সবাজার বয়কট ” এর ঘোষনা দিচ্ছেন তারা যদি কক্সবাজার কে ভালবেসে জেরালো ভাবে ” নিরাপদ কক্সবাজার ” প্রতিষ্ঠার দাবি তুলতেন তা হলে আমাদের জন্য মঙ্গল হতো বলেই আমার বিশ্বাস। কক্সবাজারের অর্থনীতি পর্যটন নির্ভর। পর্যটক সহ কক্সবাজারের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেমন আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব সেই সাথে ওখানকার ব্যবসায়ী সহ সকলের দায়িত্ব কিন্তু কম না। তবে কক্সবাজারের প্রায় অনেক ব্যবসায়ীর সহ অনেকের আচরন ই পর্যটক বান্ধব বলে আমার কাছে কখনোই মনে হয় নাই।

আবার আসতে হলো ঐ একই কথায় আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের কথায়। মাঝে মাঝে নিজের কাছে নিজেকে খুবই অসভ্য মনে হয়। যখন দেখি আমাদের দেশের কোন কোন নারীলিপ্সুক পুরুষের কাছে নারীর মৃতদেহ পর্যন্ত নিরাপদ নয়। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও নারী নিজকে নিরাপদ রাখতে পারে না। এটা ভেবেই হয়তো ভারতের চেন্নাইয়ে সেই কিশোরী সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিলেন, ” নারীরা শুধু মাতৃগর্ভে ও গোরে ই নিরাপদ “। তবে আমাূের দেশের নারীর প্রতি এত নির্যাতন ও সহিংসতার মুল কারনই হলো আইনের শাসন। পুরোপুরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় ক্ষমতার কাছে আজো আমাদের নারীরা জিম্মি। আমাদের রাষ্ট্র কি পেরেছে ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার তিন সন্তানের জননীকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় যৌন নির্যাতনের শিকার শাওন আক্তার বাঁধনকে তার ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে। না আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্হা এখানেই দুর্বল। তাই যতোদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততোদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রতিটি নারী প্রতিটি নাগরিক নিজেকে নিরাপদ ভাবাটা সম্পুর্ন ভাবেই বোকার স্বর্গে বসবাস।