সম্প্রীতির বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কলো ছোবল

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ।  শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমাদের এই মাটি সম্প্রীতি পূণ্য ভুমি হিসেবে পরিচিত।  এই মাটিতেই মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একই ঘাটের পানি খেয়ে বড় হচ্ছে। আজো বাংলাদেশে মুসলমানের কবর স্হানের জন্য হিন্দু আর হিন্দুর মন্দিরের জন্য মুসলমান জমি দান। হিন্দুর শবদেহ মুসলমানের কাঁধে চরে চিতায় যায় মুসলমানের লাশ হিন্দুর কাঁধে চেপে ও গোরস্থানে যাওয়ার নজির কম নয়। হঠাৎ করেই অনেক সময় আমাদের এই মাটি কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কলংকিত হয় ধর্মীয় উগ্রবাদীদের কালো থাবায়। ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত এমন ঘটনা যা কোন ভাবেই কাম্য নয় এমন কি আমাদের সম্প্রীতির সাথে মানায় না। গত ১৮ই এপ্রিল এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে ফরিদপুরের  মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামে। যদি ও গ্রামটির নাম কৃষ্ণনগর তবে আশে পাশের মোট পাঁচটি গ্রাম নিয়েই মুলত এই এলাকার পরিচিত পঞ্চপল্লী গ্রাম নামেই।  পঞ্চপল্লীর গ্রাম গুলি হলো কৃষ্ণনগর, শিধলাজুড়ী, তারাপুর, জাননগর, কেষ্টপুর। এই পঞ্চপল্লী গ্রামের সকল বাসিন্দা ই সনাতন ধর্মাবলম্বী। এই পঞ্চপল্লী গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কৃষ্ণনগর গ্রামের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়নের অংশ হিসেবে গত এক মাস যাবৎ বিদ্যালয় কমপ্লেক্সে একটি শৌচাগার নির্মানের কাজ চলছিল যেখানে মধুখালির ই  দুরের গ্রাম থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছিলেন যারা সকলেই ছিলেন ধর্মীয় পরিচয়ে মুসলিম। তারা ঐ বিদ্যালয়ের ভিতরে একটি কক্ষে থেকেই কাজ করছিলেন। বিদ্যালয়ের পাশে ঘেঁষেই বটতলায়  বারোয়ারি কালী মন্দির। মন্দিরের ভিতরে উপাসনার জন্য কালী ও শিব মূর্তি সহ আরো দুটি মূর্তি আছে।  প্রতিদিনের মত ১৮ এপ্রিলও মন্দিরে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে আসেন মন্দিরের পাশের বাড়ীর তপতী রানী মণ্ডল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্থাৎ সন্ধ্যা ৭টার দিকে মন্দিরের ভিতরে থাকা দেবী কালীর মূর্তির পরনে থাকা শাড়ীর আচঁলে আগুল লেগে যায়। মুহুর্তেই আগুনে কালী মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা তীরশূল পুড়ে যায়। তপতী রানী মণ্ডল মন্দিরে প্রতিদিন যে সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান তা দেবী কালীর মূর্তির হাত খানেক সামনেই।  বৈশাখের আবহাওয়া তাই ১৮ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাহিরে কিছুটা বাতাস ও ছিল। মন্দিরে আগুন দেখে মুসলিম শ্রমিক ও পাশের হিন্দু বাড়ীর লোকজনে আগুন আগুন চিৎকারের আশপাশের শত শত লোক আগুন নেভাতে এগিয়ে আসেন। উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরে থাকা দেবী কালীর মূর্তির  পরনের শাড়ী ও হাতে তীরশূল পোড়া দেখে উত্তেজিত হয়ে পরেন। নিঃসন্দেহে একজন হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী সাধারণ মানুষ যখন তার উপাসনালয়ে উপাস্য দেবী মূর্তির এমন অবস্থা দেখবেন তাতে উত্তেজিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। একে একে পঞ্চপল্লীর পাঁচ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা ই ছুটে আসেন মন্দিরে। আর এই ধর্মীয় উত্তেজনাকে কাজে লাগায় কিছু স্বার্থান্বেষী ধর্মীয় উগ্রবাদী। তারা উত্তেজিত জনতার মাথায় ঢুকিয়ে দেয় মন্দিরে আগুন দেওয়ার কাজটা পাশের বিদ্যালয়ের মুসলিম নির্মাণ শ্রমিকরা ই করেছে। তাতে উত্তেজিত জনতা মারধরের উদ্দেশ্যে ঘিরে ফেলেন উপস্থিত মুসলিম নির্মাণ শ্রমিকদের। এরই মধ্যে সাব ঠিকাদার জলিল শেখ নির্মাণ কাজের জন্য রড নিয়ে নিসমন নামের স্হানীয় যন্ত্রযান নিয়ে উপস্থিত হন।  উত্তেজিত স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগন নসিমনে থাকা রশি দিয়ে সাব ঠিকাদার জলিল শেখ নসিমন চালক লিটন খান ও নির্মাণ শ্রমিক আশরাফুল, আরশাদুল, সিরাজ শেখ, আনোয়ার হোসেনকে বেঁধে ফেলেন। স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউপি সদস্য অজিৎ কুমার সরকার ইউপি সদস্য লিংকন বিশ্বাস ও ইউপি চেয়ারম্যান শাহ্ আসাদুজ্জামান তপনের উপস্থিতিতেই স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগন নির্মাণ শ্রমিক সাব ঠিকাদার ও নসিমন চালকের উপর হামলা শুরু করে। এক পর্যায়ে স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ই কিছু উগ্রবাদীরা এতটাই ক্ষেপিয়ে তোলেন যে তারা রশি দিয়ে বাঁধা মুসলিন নির্মাণ শ্রমিক,  সাব ঠিকাদার ও নসিমন চালকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার জন্য উদ্বুদ্ধ হন। এই ঘটনায় উগ্র হিন্দু সাম্প্রতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণে জীবন হারাতে হয় আশরাফুল খান (১৭) ও আরশাদুল খানকে (১৫) নামের দুই কিশোর মুসলিম সহোদর নির্মাণ শ্রমিকে আর অত্যন্ত মারাত্মক ভাবে আহত হন বাকীরা। মন্দিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে এতটাই ক্ষেপিয়ে তোলা হয়েছিল যে স্হানীয় মধুখালি থানার পুলিশ উপস্থিত হলেও তারা আক্রান্ত মুসলিম শ্রমিকদের উদ্ধারের পরিবর্তে নিজেদের ও জিম্মি দশার মধ্যে পরতে হয় স্হানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগনের কাছে।  পরে আশেপাশে থানার পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যরা দীর্ঘ সাত ঘন্টায় কয়েকশ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে  পঞ্চপল্লী এলাকার উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করতে ও ঐখান থেকে ভিকটিমদের উদ্ধার করতে সমর্থ হন। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো ওখান হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষগুলি এতটাই অমানবিক হয়ে গিয়েছিল যে তারা দুইজন মাসুম নাবালকে পিটিয়ে মেরে উল্লাস করছিল।  তাদের বুক একটু ও কাঁপলো না যে পেটের দায়ে কাজ করতে আসা দুইটি শিশু বাচ্চারা তো আর ধর্মবিদ্বেষ কি তা হয়তো বুঝে না। বিদ্যালয়ে অবস্থানরত মুসলিম শ্রমিকরা নিশ্চয়ই অবগত যে তারা যেখানে আছেন সেটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা এখানে কোন উদ্দেশ্যে তারা মন্দিরে প্রতিমার গায়ে আগুন দিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনবেন?  তারা অবশ্যই বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মন্দিরে প্রতিমার গায়ে আগুন দেওয়া বা ওখানে কোন অন্যায়ের ব্যবস্হা সম্পর্কে কিছুটা হলে ও ধারনা ছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই ঘটনার পর পর ই এক শ্রেনীর হিন্দু উগ্রবাদী গোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক আইডি থেকে নানা ধরনের উস্কানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা লিপ্ত হয়েছিলেন । এর আগেও গত ১৯ ফেব্রুয়ারী চট্রগ্রাম আদালত চত্বরে হিন্দু ধর্ম ছেড়ে নও মুসলিম এক তরুণকে বিয়ের জের ধরে যে উস্কানিমূলক স্লোগান শুনেছি তা সত্যি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জন্য এক ভয়ংকর শকুনের ই কালো ছায়া।

আমি আগেই বলেছি আমরা বাংলাদেশের মানুষ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী আর এই চেতনাকে বিশেষ পূঁজি করে আমাদের অগ্রজের ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশ নামের একটি রাষ্ট্র আমাদের জন্য প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।  আমরা কখনোই চাইনা তাদের ত্যাগে অর্জিত আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি কখনোই সাম্প্রদায়িক শকুনের থাবায় ছিন্নভিন্ন হউক।  কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই কিছু;দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি আমাদের সোনার বাংলায় সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষ বাঁচিয়ে রাখার পায়তারায় ব্যস্ত।  এমনকি তারা অনেকটা স্বার্থক ও হয়েছে। তার কিছু প্রমান ও  আমরা দেখেছি। স্বাধীনতার পর থেকেই ঐ অপশক্তি গুলি সক্রিয়। তারা কোন না কোন ছুতো তুলে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংসের পায়তারায় ব্যস্ত। ভারতের অযোধ্যাতে বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণকে কেন্দ্র করে ১৯৮৯ ও ৯০ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এক শ্রেনীর মুসলিম উগ্রবাদী গোষ্ঠী ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘড় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ও মন্দিরে  হামলা চালিয়ে দেশকে এক অরাজক পরিস্থিতি দিকে ঠেলে দিতে চেয়ে ছিল।  এর পর একে একে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে কখনো ফেইসবুকে ধর্ম অবমানর ধোয়া তুলে কখনো মন্দিরে পবিত্র কোরান শরীফ রাখার কথা বলে।  তার প্রমান রামু,  নাসির নগর,  কুমিল্লা, পাবনার সাথিয়া সহ অনেক এলাকাই। এমনকি কখনো কখনো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ও আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও হামলার ঘটনার ঘটেছে।  তবে দুঃখ জনক হলেও সত্যি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া কোন সাম্প্রদায়িক অঘটনের সুষ্ঠু ও সঠিক বিচার আজ ও পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি।  যাও দুয়েকটা হয়েছে তা সবই শুধু মাত্র রাজনৈতিক ফয়দা হাসিলের জন্য।  সব সময়ই ই সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা ও মূল হোতারা রয়ে গেছেন ধরা ছোয়ার বাহিরে। নাসির নগরের রসরাজ দাস ফেইসবুকের ব্যবহার না জানলেও নাসিরে নগরের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর হামলা হয় ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে। কুমিল্লার পুজা মণ্ডপে পবিত্র কোরান শরীফ রাখার অভিযোগ এনে কুমিল্লা, চাঁদপুর,  রংপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের উপর হামলা হয় ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে এমন কি আমরা দেখলাম মধুখালির ঘটনার পর সেই ফেইসবুক উস্কানি যা আমি আগেই বলেছি। আমি আগেই বলেছি আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য দেশীয়৷ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অপশক্তি ইন্ধন পুরনো কখনো আমরা একটি গোষ্ঠীর কাছ থেকে স্লোগান  শুনিছি ” আমরা হব তালিবান, বাংলা হবে আফগান “।  আবার কখনো কখনো একটি গোষ্ঠী বাংলাদেশকে ” অখণ্ড ভারত ” করার শপথ নিতে ও দেখেছি।  কিন্তু কোন এক অজানা কারনে এই উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আজো বাংলাদেশের মাটিতে বুক ফুলিয়ে অহংকারে সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলে যাচ্ছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে কোন সাম্প্রদায়িক অপশক্তির জায়গা হতে পারে না বা হতে দেওয়া যাবে না।

নিরাপদ বাংলাদেশ আর কত দুর??

একজন নারীর কাছে জীবনের চেয়ে ও সম্ভ্রম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় ই শুনে থাকি জীবনের বিনিময়ে সম্ভ্রম রক্ষার কাহিনী। এত ঘটনার পর ও কি আমাদের নারীদের সম্ভ্রমের নিরাপত্তা জীবনের নিরাপত্তা আমরা অর্থাৎ আমাদের রাষ্ট্র দিতে পেরেছে ? আমাদের রাষ্ট্র কি আজো আমাদের নারীদের জন্য নিরাপদ? উত্তরটা এক শব্দেই আসবে ” না “। কর্ম থেকে পরিবার প্রায় সব জায়গাই ই আমাদের নারী নানান বৈষম্য নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার। এসব ঘটনার হয়তো বিন্দু মাত্র চিত্র আমরা জানি বা জানতে পারি। যদি সেই সকল ঘটনা আলেচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়। মাত্র কয়েক দিন আগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহার একটি অশ্লীল অডিও ক্লিপ সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো। তিনি হরহামেশাই নারী সহকর্মীদের সঙ্গে কর্মস্থলে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। যা অধস্তনদের বিব্রত করে। এর আগে জামালপুর- ৪ আসনের সাংসদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান ও চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহীর ফোন আলাপ আমারা শুনে অনেকটাই হতভম্ব হয়েছি। সেই সাথে মুরাদ হাসানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যরিষ্টার জাইমা রহমান কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও আমাদের কম লজ্জিত করে নাই। হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। অথচ আমাদের সমাজে শিক্ষকের মর্যাদা অভিভাবক তুল্য। আর আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্হায় নারীর প্রতি এহন ঘৃন্য মনোভাবাপন্ন আচরন নতুন কিছুই নয়। গত ২২ ডিসেম্বর সাগর কন্যা কক্সবাজারের ঘটে গেল এক অমানুষিক কান্ড। কক্সবাজারে ভ্রমণে আসা এক নারীকে গনধর্ষণ করেন কক্সবাজারের ই কিছু স্হায়ী সন্ত্রাসী। ঐ ঘটনার মুল হোতা মো. আশিক ও তার সহযোগী হিসেবে ছিল তার সন্ত্রাসী গ্রুপের আরো কয়েক জন যার মধ্যে একজন ছিলেন স্হানীয় জিয়া গেস্ট হাউজ নামের একটি হোটেলের ম্যানেজার। ঘটনার দিন স্থানীয় আশিকুর রহমান ও তাঁর সহযোগীরা ধর্ষণের শিকার ঐ মহিলা ও তার স্বামীর সাথে এক ধরনের পায়ে পারাদিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে তার পর সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে তাকে তার আট মাসের শিশু সন্তান ও স্বামীকে অপহরন করে। পরে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে ও কলাতলী জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে তাঁকে দুই দফা ধর্ষণ করেন। তবে কষ্ট ও বেদনার বিষয় হল ঘটনার পর পথচারী একজনের সহযোগিতায় ঐ নারী জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ও নাকি কেন সহযোগিতা পান নাই। এমন কি স্হানীয় পুলিশ ঘটনার বিস্তারিত জানার পর ভিক্টিম মহিলাকে থানায় গিয়ে সাধারন ডায়েরি করার কথিত উপদেশ দেন। এর পর ঐ ভদ্র মহিলা স্হানীয় র‍্যাব অফিসে ফোন করে ঘটনা জানালে র‍্যাব এসে তাকে উদ্ধার করেন এবং মামলা করার ব্যবস্হা করেন। পরে আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশের যেই বক্তব্য ও ভুমিকা দেখেছি তা সত্যি কথা বলতে কি আমার কাছে মনে হয়েছে অপরাধীদের রক্ষায় ট্যুরিষ্ট পুলিশ বিশেষ ভুমিকা পালন করতে চাচ্ছিলেন। যদি ও শেষে পর্যন্ত মাদারীপুর থেকে ধর্ষণ মামলার মুলহোতা আশিককে গ্রেফতার করতে স্বার্থক হয় র‍্যাব। গ্রেফতারের পর আশিকের বরাত দিয়ে র‍্যাবের মুখপাত্র যে সকল তথ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন তা সত্যি ভয়ানক এবং দুঃখ জনক। সংবাদমাধ্যমের খবরে কক্সবাজের ট্যুরিষ্ট পুলিশের ভাষ্য অনু্যায়ী বিভিন্ন ভাবে ধর্ষনের শিকার নারী ও তার স্বামীকে অপরাধী প্রামনের চেস্টায় লিপ্ত ছিলেন তারা বরাবরই বলে আসছিলেন ঐ নারী তিন মাস যাবৎ কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে বিভিন্ন নামে অবস্হান করছেন! এবং অপরাধীরা ঐ নারীর পুর্ব পরিচিত। র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য অনুযায়ী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত আট মাসের শিশুর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতে স্বামী-সন্তানসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যান ওই নারী। পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ জোগানোর বিষয়টি জেনে তাঁদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন গ্রেপ্তার আশিক ও তাঁর সহযোগীরা। এ অর্থ না দেওয়ায় ধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। তিনি আরো জানায়, ওই নারী আশিকের পূর্বপরিচিত ছিলেন না। ঘটনার এক দিন আগে সৈকতে তাঁদের পরিচয় হয় যখন আশিক তাদের কাছে চাঁদা দাবী করে। সন্তানের চিকিৎসার জন্য পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে আশিকদের নজরে পড়েন ওই নারী।২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন আশিক। তাঁর নামে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ ১৭টি মামলা আছে। পাঁচবার পুলিশ আশিককে গ্রেপ্তার করেছে। আশিকের নেতৃত্বে চক্রটি পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আশিক বিভিন্ন হোটেলে ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে যোগসাজশে পর্যটকদের বিভিন্নভাবে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করতেন। এক পুলিশ সদস্যকেও ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করেন আশিক। বহুল পঠিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিউজ বাংলা২৪ এর তথ্যমতে, আশিকের চক্রটির আশ্রয়দাতা হিসেবে আছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। এ ছাড়া কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেও এই চক্রের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশিকের বাহিনী। আর আশিকের ফেইসবুক প্রোফাইলে ও এর প্রমান মিলে। কিন্তু হতাশার বিষয় কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশের ভাষ্য আর র‌্যাবেরসম্পুর্ন বিপরীত মুখী ভাষ্য।

ধরে নিলাম কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশ ধর্ষণের শিকার নারী ও তার স্বামীকে যে ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন তা সত্যি। ধরে নিলাম ধর্ষিতা মহিলা একজন পতিতা মাদক কারবারি তার স্বামী ও একজন পতিতার দালাল ও মাদক কারবারি। তার পর ও ১৭ মামলার আসামী চিহ্নিত সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কিভাবে কক্সবাজারের মত দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রের একটি জনবহুল এলাকা থেকে তাদের অপহরন করে। তার পর আবার ঝাউতলার মত জায়গার ঝুপড়ি দোকানের পিছনে নিয়ে একবার গন ধর্ষন করে পরবর্তীতে একটি গেষ্ট হাউজে। কক্সবাজারের ট্যুরিষ্ট পুলিশ ভিকটিম সম্পর্কে যেই ধরনের তথ‍্য উপস্হাপনের চেষ্টা করেছেন তা শুধু ন‍্যায় বিচারের পরিপন্থীই নয় বরং অপরাধীদের রক্ষার পদক্ষেপ ও বটে। আর আমাদের বেশ কিছু গণমাধ্যম তাদের বিবেক বিবেচনা না খাটিয়ে সঠিক অনুসন্ধান না করে শুধু পুলিশের ভাষ্যমতে ভিকটিমকে পতিতা অথবা চোরাকারবারি এবং তার স্বামীকে একজন পতিতার দালাল ও মাদক কারবারি প্রমানের একধরনের মিডিয়া ট্রায়াল শুরু করেছিল যা সত্যি লজ্জাস্কর ব্যাপার।

কক্সবাজের ঘটনা আমাদের জন্য একটি সামান্য উদাহরন মাত্র। প্রতিনিয়ত ই আমাদের নারীররা কোথাও না কোথাও নানান ভাবে হেনস্থার শিকার। বেশির ভাগ সময় ই লোকলজ্জাকে ভয় করে তারা এটাকে ছাপিয়ে যান। যা আমাদের কাছে এক অজানা অধ্যায় হিসেবে ই রয়ে যায়। আমাদের সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নারীদের রক্ষা করতে বা নিরাপদ রাখতে যে ব্যর্থ তারও প্রমান কক্সবাজারের ঘটনাই নয় প্রতিদিন ই এমন ঘটনা ঘটছে। তার কিঞ্চিৎ ই জনসম্মুখে আসে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও বীচ ম্যানেজমেট কমিটি নারী ও শিশুদের জন্য বীচের ধারে সংরক্ষিত এলাকা করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন যা সত্যি সবাকে অবাক করেছে। যদিও পরে তোপের মুখে সেই জ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত থেকে দুরে সরে এসেছে প্রশাসন। পরিবার পরিজন নিয়ে সকলেই বেড়াতে যান একান্তে তাদের সাথে সময় কাটাতে। আর কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া মানেই সাগর ও সৈকতকে উপভোগ করা সাগরের নোনা জল আর বালির সাথে পরিবারের সকলকে নিয়ে মিতালি করা। আর সেখনে যদি নিরাপত্তার নামে সংরক্ষিত এলাকা করে পারিবারিক আনন্দে দেওয়া দেওয়া হয়। তা হলে এর অর্থ কি দাড়ায়? প্রথমত পর্যটকদের কক্সবাজার আসতে নিরুৎসাহিত করা আর সেই সাথে স্হানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যটদের যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্হায় ব্যর্থ। কক্সবাজারে পর্যটক ধর্ষন নতুন কিছুই নয়।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রথম ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১৯৮৭ সালে। প্রকাশ্য বিচে এক বিদেশি পর্যটককে ধর্ষণ করে কয়েকজন বখাটে। ওই ঘটনায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। ২০০৫ সালেও কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে এক বিদেশি পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন। ওই ঘটনায় ধর্ষক গ্রেফতার হয়। এরপর ২০১৯ সালের কক্সবাজারে “গুড ভাইব কটেজ” নামের একটি রিসোর্টে অস্ট্রেলীয় এক নারী পর্যটক ধর্ষণের শিকার হন ঐ রিসোর্টের দুই কর্মচারী কতৃক। যদিও পরে ঐ ধর্ষকদের গ্রেফতার করা হয়।

ইতোমধ্যে অনেক নেটিজেন ই তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দেওয়ালে বিশেষ করে ফেইসবুকের দেওয়া ” কক্সবাজার বয়কট ” এর আহ্বান জানিয়ে পোস্ট করছেন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন কক্সবাজার কাদের সম্পদ? পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ” কক্সবাজার ” আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সম্পদ রাজনৈতিক মদদপুষ্ট কিছু বিপদগামী সন্ত্রাসীর নানান অপকর্ম প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর খামখেয়ালী পনার জন্য তো আমারা আমাদের নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করতে পারিনা। তাই যারা ” কক্সবাজার বয়কট ” এর ঘোষনা দিচ্ছেন তারা যদি কক্সবাজার কে ভালবেসে জেরালো ভাবে ” নিরাপদ কক্সবাজার ” প্রতিষ্ঠার দাবি তুলতেন তা হলে আমাদের জন্য মঙ্গল হতো বলেই আমার বিশ্বাস। কক্সবাজারের অর্থনীতি পর্যটন নির্ভর। পর্যটক সহ কক্সবাজারের প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেমন আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব সেই সাথে ওখানকার ব্যবসায়ী সহ সকলের দায়িত্ব কিন্তু কম না। তবে কক্সবাজারের প্রায় অনেক ব্যবসায়ীর সহ অনেকের আচরন ই পর্যটক বান্ধব বলে আমার কাছে কখনোই মনে হয় নাই।

আবার আসতে হলো ঐ একই কথায় আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের কথায়। মাঝে মাঝে নিজের কাছে নিজেকে খুবই অসভ্য মনে হয়। যখন দেখি আমাদের দেশের কোন কোন নারীলিপ্সুক পুরুষের কাছে নারীর মৃতদেহ পর্যন্ত নিরাপদ নয়। পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও নারী নিজকে নিরাপদ রাখতে পারে না। এটা ভেবেই হয়তো ভারতের চেন্নাইয়ে সেই কিশোরী সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিলেন, ” নারীরা শুধু মাতৃগর্ভে ও গোরে ই নিরাপদ “। তবে আমাূের দেশের নারীর প্রতি এত নির্যাতন ও সহিংসতার মুল কারনই হলো আইনের শাসন। পুরোপুরি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারায় ক্ষমতার কাছে আজো আমাদের নারীরা জিম্মি। আমাদের রাষ্ট্র কি পেরেছে ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় গণধর্ষণের শিকার তিন সন্তানের জননীকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় যৌন নির্যাতনের শিকার শাওন আক্তার বাঁধনকে তার ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে। না আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্হা এখানেই দুর্বল। তাই যতোদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততোদিন পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রতিটি নারী প্রতিটি নাগরিক নিজেকে নিরাপদ ভাবাটা সম্পুর্ন ভাবেই বোকার স্বর্গে বসবাস।

নতুন মার্কিন ভিসা নীতিতেই কি আমাদের রাজনীতির বর্তমান পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া?

নতুন মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের অনেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা যে কাজ করছে তা আমরা তাদের গত কয়েক দিনে অনেকের আচার আচরণ, কথাবার্তা ও শারীরিক ভাষার মাধ্যমে কিছুটা হলে ও বুঝতে সক্ষম হয়েছি। দায়িত্বশীলদের অনেকেই এখন একেক ভাবে কথা বলছেন। কারো কথার মধ্যে হচ্ছে শব্দ চয়নে ভুল আবার কেউ নাকি নিজের ব্যক্তিগত অভিমত কে ভরা মজলিসে জাতির জন্য নসিহত হিসেবে উপস্থাপন করছেন। এইতো গত ৪ জুন রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক বলেছিলেন নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সময় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করবেন। এর পর এই নিয়ে যখন আওয়ামীলীগের ঘর উতপ্ত হয় মুহুর্তের মধ্যে ই জনাব আনিসুল হক তথা আইন মন্ত্রনালয় থেকে এক বিবৃতির মাধ্যমে ব্যাখ্যা আসে। ঐ বিবৃতিতে আইন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার রেজাউল করিম আইনমন্ত্রী যে সকল কথা বলেছেন, তার অনেক কথা ই উল্লেখ করে লেখেন, “সাংবাদিকদের উপর্যুপরি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে মাননীয় মন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রসঙ্গে শব্দ চয়নে ভুল করেছেন। ” এর পর কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শো তে জনাব আনিসুল হক তার ঐ বক্তব্যের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সরকারের সময়কালে পদত্যাগের কথা কে মুখ ফসকে বের হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। মানুষ মাত্রায় ই এমন হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই না।

এর পর পর ই বর্ষীয়ান রাজনীতিবদি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জনাব আমির হোসেন আমু রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১৪ দল আয়োজিত এক সভায় বললেন , ” প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। সংবিধানের মধ্যে থেকে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দলের জন্য আলোচনার দরজা খোলা আছে। ” পরে অবশ্য জনাব আমির হোসেন আমু আবার ভিন্ন সুর দিয়েছেন। অবশ্য জনাব আমুর ঐ বক্তব্য নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের মন্তব্য ছিল , ” বিএনপির সাথে সংলাপ নিয়ে আমির হোসেন আমুর বক্তব্য তাঁর ব্যক্তিগত। এটি সরকার বা আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের বক্তব্য নয়। ” স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ১৪ দলীয় জোটের সভায় জনাব আমির হোসেন আমুর মত একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ কোন উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের ব্যক্তিগত মতকে জাতির সামনে এমন ভাবে উপস্থাপন করলেন? যদিও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে নেতারা সংলাপের এই আহ্বান কে সম্পুর্ন ভাবেই প্রত্যাখান করে যাচ্ছেন। তাদের সাফ কথা আগে সকরার পদত্যাগ করবে তারপর নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন ব্যবস্হা নিয়ে আলোচনা।

গত ৩ জুন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছেন ” আমরা নিজের পায়ে চলবো। নিজের দেশকে গড়ে তুলবো। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে ও নিয়ে মাথা ব্যথা করে লাভ নাই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করবো। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবো। আমাদের অর্থনীতি আরও উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরও চাঙা হবে। ” অবশ্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর তার দলের নেতাদের অনেকেই চুপসে গেছেন। অনেকেই নিজেদের সমর্থনে চাউর করছেন মার্কিন এই ভিসা নীতি নাকি শুধু মাত্রই প্রধান বিরোধী দলের জন্য। তারা যাতে নির্বাচনে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে তার জন্যই মার্কিন সরকারের এই নতুন ভিসা নীতি। তাদের এমন দায়িত্বহীন কথা আমাদের বাধ্য হয়েই শুনতে হয়েছে। তারা কিন্তু একটি বার ও মার্কিন নতুন ভিসা নীতির মুল উদ্দেশ্য আমাদের সামনে সঠিক ভাবে উপস্থাপনের সৎ সাহস দেখাতে পারেন নাই। বাংলাদেশ প্রতিটি নুন্যতম বিবেক ও জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ও বুঝেন কেন এই ভিসা নীতি।

হঠাৎ করেই রাজনৈতিক ময়দানে বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলাম সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ১০ জুন দীর্ঘ প্রায় এক দশক পর তারা প্রায় প্রকাশ্যে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের মিলনায়তনেসমাবেশ করলো । এই দীর্ঘ সময়ে আমরা দেখেছি জামাত- শিবির যেখানেই তাদের ঘরোয়া সভা- সমাবেশের আয়োজন করেছে সেখান থেকেই নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে গত ১১ জুন রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক বলেছেন, ” বিচারের মাধ্যমে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত, দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীকে দোষী বলা যাবে না । ” আর জামাতের সমাবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য বলেছেন, ” জামায়াত একটি অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের সভা-সমাবেশ ইনডোরে করতেই পারে। ” স্বাভাবিক ভাবে ই প্রশ্ন দীর্ঘ প্রায় দশ বছর জামাত- শিবির ঘরোয়া ভাবে যেই সভা- সমাবেশ করেছে সেখানে কেন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে গ্রেফতার অভিযান চালিয়েছে? অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের ই প্রশ্ন সরকার কি মার্কিন ভিসা নীতির কারনেই নাকি আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামাত-শিবিরকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য হঠাৎ এতটা উদারতা দেখাচ্ছে?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন ভিসা নীতি যা আমাদের জন্য লজ্জা ও দুঃখের বিষয়। এই ভিসা নীতি জাতি হিসেবে আমাদের কোথায় নিয়ে দাড় করিছে তা ক্ষমতাশীনরা না ভাবলে ও আমাদের ভাবতে হয়। তার পর ও আমারা সাধারণ মানুষ এই ভিসা নীতিকে মনে প্রানে সমর্থন করছি। কারন টেলিভিশনে দেখা সেই বিজ্ঞাপনের মত ” দাগ থেকে যদি ভাল কিছু হয় তা হলে তো দাগ ই ভাল। ” ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি ও শক্ত অবস্হানের কারনে যদি আমাদের ডুবতেনবসা গনতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার হয় তা হলো আমাদের সাধারন মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন ভিসা নীতি অবশ্যই সমর্থন যোগ্য ।

এবার আসি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩ জুন ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না যাওয়ার সেই বক্তব্য নিয়ে। আওয়ামীলীগের নেতাদের প্রায় সকলকেই দেখেছি আওয়ামিলীগ প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোন বক্তব্য ই দেন না কেন তা ভাল ভাবে লুফে নিতে এবং প্রান পন তা প্রচার করতে। অবশ্যই একটি রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের এটা নীতি ও দায়িত্বের মধ্যে ও পরে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর অধিকাংশ নেতা ই এই নিয়ে আর তেমন কোন মাতামাতি করছেন না। এখন সেই বহুল আলোচিত ” খেলা হবে ” কথাটা আর শুনছি না। যারা সব সময় বলে বেড়াতেন খেলা হবে খেলা হবে সেই খেলোয়াড়েরা ও হঠাৎ বিশ্রামে। কেন জানি অনেকের ভিতর ই একটি গুপ্ত আতংক বিরাজ করছে। আর করবে ই বা না কেন? কারন দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশ খেকোরা দেশে অপরাধ দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সম্পদ সবই তো পাচার করে দিয়েছে সেই সুদুর আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া বা ইউরোপের নানান দেশে। তাদের স্ত্রী সন্তনরা ও সেখানে আয়েশি জীবন যাপন করছে। এখন যদি শুধু মাত্র একটি নির্বাচনের কারনে দীর্ঘদিনের সব আয় উপার্জন হাত ছাড়া হয়ে যায় তা হলে তো এই কুল ঐ কুল সব ই ছাড়া হবে।

অবশ্য মার্কিন ভিসা নীতি ই কিন্তু শেষ অধ্যায় নয়। এর পর আমরা দেখলাম বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ এবং বাংলাদেশের জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সর্বোত্তম সুযোগ করে দিতে জরুরি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠি দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের ছয় জন সদস্য। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১২ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশের বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তারা জোসেপ বোরেলকে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে অবদান রাখতে অনুরোধ করছেন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে ও আহ্বান জানিয়েছেন । এ ছাড়া ও বিএনপির চেয়ারপার্সোন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সরকারের সঙ্গে বিএনপি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্পৃক্ত করে চলমান সংকটের টেকসই ও গণতান্ত্রিক সমাধান খুঁজে বের করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের সকালের ই দৌড় ঝাপ শুদু মাত্র বাংলাদেশের সুষ্ঠু গনতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। যা আমাদের সকল সাধারন মানুষের এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় দাবী। তবে এরই মাধ্যে একটি দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হলো ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে। বরিশালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছে সেটা সেখানকার ভোটাররা ই ভাল জানেন তবে দুঃখজনক হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম সাহেবের উপর হামলা ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা। নগরীর চৌমাথা এলাকায় হাতেম আলী কলেজের কাছে তার উপর ৩০ থেকে ৪০ জন সন্ত্রাসী হামলা করে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য কে এম শরীয়াতউল্লাহ বক্তব্য মতে , ছাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথার কাছে ৩০ থেকে ৪০ জন নৌকা সমর্থক তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এসময় তারা লাঠিসোঁটা ও পাথর ব্যবহার করেন। তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। আমরা অবশ্য দেখেছি জনাব সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের সাথে সাথেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা অবহিত করেছেন। তবে এই নিয়ে আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনাব কাজী হাবিবুল আউয়াল যেই ধরনের মন্তব্য করেছেন তা কোন ভাবেই একজন এত বড় মাপের দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে আমরা আশা করি নাই। এবং এমন মন্তব্যের গ্রহনযোগ্যতা আছে বলে ও বিশ্বাস করি না। কয়েক দিন আগে অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কোনো ভোটার যদি সঠিকভাবে ভোট দিতে না পারেন, তাহলে চিৎকার করে দেবেন। আমরা সেখান থেকে বসে ব্যবস্থা নিবো। সিসিটিভির মাধ্যমে সব কেন্দ্রের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করব। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেন্দ্রের ভিতর থেকে ভোটারের চিৎকার শোনার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে ও কেন্দ্রের বাহিরে যে একজন প্রার্থীকে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে আহত করলো তা কেন তার নজরে আসলো না? এমন দৃষ্টি নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন কিভাবে তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে পরিচালনা করবে সেটাই আজ সকলের মনে বড় প্রশ্ন।

একজন শিক্ষক কি এতটাই নিলজ্জ হতে পারেন?

শিক্ষার জন্য শিক্ষাব্যবস্হা ও শিক্ষার পরিবেশ এই দুইটাই এক সাথে সম্পৃক্ত।  যেই দেশে শিক্ষাব্যবস্হা ভাল সেই দেশে শিক্ষার পরিবেশ ভাল হওয়াটা স্বাভাবিক এবং হতে বাধ্য।  আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ কেমন তা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখেনা।  পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকার একহাজারে ও নাম পাওয়া যায় নাই আমাদের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের।  অথচ আমাদের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে সেরা সেরা রেজাল্ট নিয়ে আসছে।  চাকরি করছেন বিশ্বের সেরা সেরা কোম্পনির উঁচু উঁচু পদে।  যা আমাদের একদিকে যেমন গর্বিত করে অপর দিকে শংকিত।  এর জন্য অবশ্যই দায় বর্তায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাব্যবস্থা উপর।  গত কিছুদিন যাবত ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল সিলেটের  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাব শাবিপ্রবি । শাবিপ্রবির ছাত্রীদের একটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সাথে প্রভোস্টের দুর্ব্যবহার এবং হলে বিছানা সংকট ও খাওয়ার সমস্যা সমাধানের দাবিতে কয়েক দিন আগে ছাত্রীরা আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনকে অপ্রতিহত করার জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর প্রথমে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রীলীগ পরে গত ১৬ই জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের বেধড়ক পিটুনি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ, সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটার পর থেকে আন্দোলন ব্যাপক জোরালো রূপ নেয়। উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি। এই আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য ই হউক বা সালাম দিতেই হউক জরুরী ভিত্তিতে  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয় ।  সেই ব্যবস্হায় কোন কাজ হয় নি বরং ছাত্র ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তকে মেনে না নিয়ে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজনকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।  এর পর থেকে  আন্দোলনকারীদের একাংশ  আমরণ অনশন করছে। এই অনশনে অনেক অনশনরত ছাত্র ছাত্রী আজ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে বিছানায়। অনেকে অসুস্থ হয়ে ও অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।   শিক্ষামন্ত্রীর সাথে আলোচনার পর ও এর কোন সুষ্ঠু সমাধান হয় নি। এখন শাবিপ্রবির  আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবী উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ। কারন তাদের দাবী ভিসির উস্কানিতেই তাদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের  হামলা।

শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুসদের ডিন ছিলেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৬ বা ২০১৭ সালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে বেশ আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে।  ২০১৭ সালে বেসরকারি টেলিভিশন  চ্যানেল- ২৪ সার্চলাইট নামের একটি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠানে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন পত্র ফাঁস নিয়ে ২ পর্বের একটি বিশেষ ধারাবাহিক প্রতিবেদনে প্রচার করে।  ঐ প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি ঢাকার ইন্দিরা রোডের একটি বাসা বাড়ীতে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপা হতো। ঐ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদক ছিলেন সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান।  সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান সম্প্রতি তার ফেইসবুক ওয়ালে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর ও ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন।  সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান লিখেছেন, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের  আমেরিকা প্রবাসী অতি পছন্দের এক ব্যক্তি এই প্রশ্ন ছাপার কাজ করেন। এবং প্রশ্ন ছাপার কাজের সময় তিনি আমেরিকা থেকে দেশে আসেন! এমনকি সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল ইমরান লিখেছেন,  অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের

আমলে যতগুলো নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব পেয়েছে সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ, তার সবগুলোর প্রশ্নপত্রই ছাপা হয়েছে ওই প্রেসে । একই লোকেরা দায়িত্বে ছিল এবং প্রায় প্রতিটি পরীক্ষাতেই প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এই তথ্য গুলি চাঞ্চল্যকর ও ভয়ংকর বলার কারন, জাতির বিবেক শিক্ষক।  শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়র কারিগরি।  একজন মানুষের জন্ম তার পিতা মাতার মাধ্যমে হলে ও আর্দশ মানুষ হয় শিক্ষকের মাধ্যমে। আমি গাও গ্রামের ছেলে স্কুলের প্রথম দিন মা যখন আমাকে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন স্কুলের ভর্তির পর প্রধান শিক্ষকের সাথে হাড্ডি মাংসের চুক্তি করে এসে ছিলেন।  বলেছিলেন স্যার এই বাঁদর কে মানুষ করার জন্য আপনার কাছে দিয়ে গেলাম তাই মানুষ করার জন্য যা যা করতে হয় তাই করবেন মাংস আপনার আর হাড্ডি আমার।  বহুবার শিক্ষকের হাতে বেতের পিটুনি চড় থাপ্পর খেয়েছি।  ভয়ে কোন দিন বাড়ী এসে কাউকে বলি নি।  সব সময় শিক্ষকের আসন আমাদের সমাজে সবার উপরেই ছিল।  কিন্তু কালের বিবর্তনে আমাদের অনেক শিক্ষকের নানান কর্মকান্ড তাদের সেই আসনকে অনেক নীচে নামিয়ে দিয়েছে।

বলছিলাম শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কথা। এরই মধ্যে তার একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।  ঐ অডিও ক্লিপে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের নিয়ে একটি বেমানান বাজে মন্তব্য করতে শুনা গেছে।  তিনি বলেছেন, ” জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের সহজে কেউ বউ হিসেবে নিতে চায় না “। শিক্ষক আর পিতা-মাতার মধ্যে তফাৎ নাই বললেই চলে।  তাই কোন বিবেক ও রুচিতে তিনি এমন বেফাস মন্তব্য করেছেন তা আমার বিবেকে ধরছেন না। যেই শিক্ষক তার কন্যা সমতুল্য ছাত্রীদের সম্পর্কে এমন বাজে মন্তব্য করতে পারেন  আমার ব্যক্তি গত ধারনা তিনি তার নিজ কন্যাকে নিয়ে ও বাজে মন্তব্য করতে কুণ্ঠা বোধ করবেন না। ইতোমধ্যে তিনি তার ঐ মন্তব্যের  জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ক্ষমা প্রার্থনা যদিও মহত্ত্বের লক্ষন তবে তা ক্ষেত্রে নয়।

আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয় গুলিতে ভিসিদের নিয়ে বির্তক নতুন কিছুই নয়।  কারন প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ গুলিতে সাধারণত যোগ্যতার চেয়ে দলীয় তাঁবেদারিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।  আর সেই গুরুত্ব থেকেই নিয়োগ পান তারা। যখন কোন সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের গুরুত্বপূর্ণ মানুষ গুলি দলদাসে পরিনত হয় তখন আর সেখানে বিবেব বুদ্ধি বলতে অবশিষ্ট কিছু আর থাকে না থাকতে পারে ও না। বেশ কিছুদিন যাবত আমাদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নানান দুর্নীতি ও অপকর্মে কথা আমরা সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনে আসছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি

এম আব্দুস সোবহান তার প্রথম মেয়াদ পার করেছিলেন স্বজনপ্রীতি মাধ্যমে আর দ্বিতীয় মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ৫০ লাখ টাকার বিনিময়  শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদে ১৪১ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ দিয়ে যান।গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিন ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন৷ তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত ভর্তি ফি, হল ভাড়া, ক্রেডিট ফি, চিকিৎসা ফি আদায়ের অভিযোগ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা৷খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খানের বিরুদ্ধে ও অভিযোগ ওঠে পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সুযোগের মাধ্যমে চাকুরির ব্যবস্হা করার। টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিন,  শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম রোস্তম আলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উপাচার্য মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতি সহ নানান অভিযোগের কমতি ছিলনা।  তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে ছিল। অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ অবশ্য তার আনা পাল্টা চাঁদাবাজির অভিযোগে তৎকালীন  ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে শোভন-রাব্বানীকে পদ হারাতে হয় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। যদি পরে শোভন ও রাব্বানী বিভিন্ন প্রোগ্রামে নিজেদের নির্দোষ দাবী করে দুর্নীতির তীর ভিসি ও তার পরিবারের দিকেই নিক্ষেপ করেছেন। আর নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধ তো অভিযোগর কমতি নাই।  তিনি চার বছরে ১৪৬০ দিনের মধ্যে রংপুরে উপস্থিত থেকে অফিস করেছেন মাত্র ১১৮ দিন৷ আপ্যায়ন সহ বিভিন্ন খাতে তিনি অনিয়মের মধ্যমে নাকি অনেক টাকা তুলে নিয়েছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ১১১টি দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়েছে৷

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে যখনই কোন ভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে কোন ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় তখন ই দেখেছি সরকার ভিসির পক্ষ নিয়ে সাধারন ছাত্রদের দমন-পীড়নের সকল ব্যবস্হাই করেছেন।  কখনো কখনো তারা স্বার্থক হলে অনেকাংশেই ছাত্রদের প্রবল আন্দোলনের কাছে সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছেন।  শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলায় ও আমরা এর ব্যাতিক্রম দেখছি না।  ইতোমধ্যে শাবিপ্রবির আন্দোলনরত ছাত্ররা নাকি ভিসির বাস ভবনের বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন। এমনকি অন্যান শিক্ষকদের সাথে তার সরাসরি যোগাযোগে ও বাঁধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর ভিসির বাস ভবনে খাবার নিয়ে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে ফিরে যান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবী পুলিশ ছাড়া আর বাহিরের কেউ ভিসির বাস ভবনে যেতে পারবেন না। খাবার সহ জরুরি প্রয়োজনীয় যা যা প্রয়োজন হয় তার সব ব্যবস্হা ই নাকি করবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ইতো মধ্যে শাবিপ্রবির সাবেক শিক্ষক ডঃ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড.ইয়াসমীন হক ঢাকা থেকে সিলেট ছুটে গেছেন অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনসন ভাংগাতে।  তারা পরম মমতায় শিক্ষার্থীদের অনশন ভাংগানোর চেষ্টা করছেন।  শিক্ষার্থীরা ও একজন আর্দশ শিক্ষকে প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের অনশনব্রত ভংগ করেছেন।  তবে সবচেয়ে লজ্জার কথা হলো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানকারী পাঁচজন প্রাক্তন ছাত্রকে গ্রেফতারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদি ও বিভিন্ন চাপের কথা চিন্তা করে হয়তো পরবর্তীতে তাদের জামিন দেয় আদালত।  যদি এর প্রতিবাদে ডঃ জাফর ইকবাল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তার লেখার সম্মানীর দশ হাজার টাকা প্রদানের কথা বলেন। ছাত্ররা একজন শিক্ষককে সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারলে ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের ভিতর আত্মসম্মান ও লজ্জা বোধ আছে বলে মনে হয় না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অবশ্যই একটি সম্মানিত পদ।  সম্মান কে না চায়?  তবে সেই সম্মান জোড় করে ধরে রাখতে গিয়ে যদি আত্মসম্মান ইজ্জত সব বিলিন করে দিতে হয় তা হলে সেই সম্মানিত পদ আর সম্মানের থাকে কি? তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উপাচার্যের পদ কি সম্মেলনের নাকি ক্ষমতা প্রভাব প্রতিপত্তির?  যদি সম্মানের ই হয় তা হলে শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের উচিত হবে এখন তার মান সম্মান যত টুকুই আছে তা নিয়ে মানে মানে বিয়া নেওয়া।  আর যদি উপাচার্যের পদ ক্ষমতা প্রভাব প্রতিপত্তির ই হয় তা হলে সেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাসীনদের সাথে মিলে যা তার জন্য ভাল সেটাই করবেন।  তবে আমার বিশ্ব দেশের প্রগতিশীল মেধাবী বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের সমর্থন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষেই।

শিষ্টাচারের বাহিরে কেন আমাদের রাজনীতি?

বাংলাদেশের অনেকে বিবেকবান মানুষের মনেই প্রশ্ন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশিক্ষিত মেধাবী তরুনরা কেন তেমন ভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না। এই প্রশ্ন যে আজ তেমনটি নয় এটা বহুদিনের প্রশ্ন। যারা এমন প্রশ্ন করেন বা যাদের মনে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায় এর স্পষ্ট উত্তর ও তাদের জানা আছে। তার পর ও দেশের জন্য দেশের সাধারন মানুষের জন্যই দেশ প্রেম থেকে তাদের এমন প্রশ্ন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ মানুষের জীবন ও আড়াই লাখ মা বোনদের সম্ভ্রম এর বিনিময় অর্জিত বাংলাদেশকে প্রায় প্রতিটি নাগরিক ই অন্তর দিয়ে ভালবাসে। তবে কিছু কিছু আছেন যারা শুধু দেশের সাথে ভালবাসার ই অভিনয় করে। ওদের সংখ্যা নেহাত অল্প। আর পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই যুগে যুগে এমন তথাকথিত মানুষের জন্ম হয় তাই ওদের নিয়ে কথা না বলাই ভাল। ময়লা যতই অল্প হউক দুর্গন্ধ অনেক দুরে ছড়ায় অনেক রোগের জন্ম দেয়। তাই ওদের নিয়ে আজ আর কিছু বলছি না। বাংলাদেশের রাজনীতি দিনের পর দিন ক্রমান্বয়ে ই কুলষিত হচ্ছে রাজনীতিতে ময়লা ছোড়াছুড়ি এক নিকৃষ্ট পার্যায়ে এসে দাড়িয়েছে। অথচ আমাদের অতীতের রাজনীতির ইতিহাস কি এমন ই ছিল? না মোটেও না নিকট অতীতে ও আমাদের রাজনীতিতে ছিল এক সৌহার্দ্যপুর্ন অবস্হান। রাজনীতির মাঠে যাই বলুক কিন্তু রাজনৈতিকবিদের ভিতরে শ্রদ্ধা ভালবাসার কমতি ছিল না। এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামিলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব জিল্লুর রহমানকে বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত জনাব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন চায়ের কাপ হাত তুলে দেওয়ার ছবি ঘুরে বেড়ায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ুমন ভুরি ভুরি শিষ্টাচার ও মনবতার উদাহরণ রয়েছে।

অতি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসানের একটি টক শো বক্তব্য আমার মত সমগ্র বিবেকবান মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। তার পুরো বক্তব্যেই ছিল এক ধরনের বেয়াদবি ভাব সম্পন্ন আক্রমনাত্মক বৈষম্যমুলক অশ্লীল নারী বিদ্বেষী, বর্ণবাদী, বিকৃত ও যৌন হয়রানিমূলক। প্রথমে আমার ভাবতে সমস্যা হয়েছে এটা কি আমাদের দেশের সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা একজন প্রতিমন্ত্রীর পেশা গত জীবনে একজন ডাক্তার পারিবারিক জীবনে একজন পিতা ও একজন স্বামীর বক্তব্য। পরোক্ষনে ই আমার ঘোর কাটল দেখলাম মুহুর্তে ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদে উত্তাল।

ডাঃ জাফরউল্লা চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বিলেতের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস-এ এফআরসিএস পড়াকালীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি চূড়ান্ত পর্ব শেষ না-করে লন্ডন থেকে ভারতে ফিরে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার নিমিত্তে আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এম এ মবিনের সাথে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট “বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল” প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন। তিনি সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেক নারীকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য জ্ঞান দান করেন যা দিয়ে তারা রোগীদের সেবা করতেন এবং তার এই অভূতপূর্ব সেবাপদ্ধতি পরে বিশ্ববিখ্যাত জার্নাল পেপার “ল্যানসেট”-এ প্রকাশিত হয়। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুবই একজন স্নেহভাজন ব্যক্তি ছিলেন। তাই জাতির জনকের গ্রামকে উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু রূপে গড়ে তোলার লক্ষেই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া জায়গায় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকার অদুরে সাভারে গড় তুলেন গণস্বাস্থ্য ফিল্ড হাসপাতাল। বর্তমানে আমাদের দেশে যেই কয়েক জন সর্বজন শ্রদ্ধেয় বয়োজ্যেষ্ঠ সম্মানিত নাগরিক আছেন তাদের মধ্যে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী অন্যতম একজন। অথচ তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান যেই অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আক্রমণ করেছেন তা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব কি না তা যথেষ্ট প্রশ্নের জন্ম দেয়। রাজনীতিতে মতের বিরোধ নতুন কিছুই নয়। রাজনৈতিক ময়দানে একজন আর্দশ নীতিবান রাজনীতিবিদ তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যুক্তির মাধ্যমে শিষ্টাচারের ভিতর থেকে আক্রমণ করে তাকে পরাজিত করার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ডাঃ মুরাদ সেদিনের ঐ ভার্চুয়াল টক শোতে বাংলাদেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া নিয়ে যে নানান অশ্রব্য অশ্লীষ কটুক্তি করপছেন সেই সাথে বেগম জিয়ার নাতনি ব্যারিষ্টার জাইমা রহমান কে নিয়ে যে কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল মন্তব্য করেছেন তা কোন সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। জাইমা রহমান একজন নারী তিনি বয়সে আমাদের মেয়ের মত তাকে নিয়ে একটা মিথ্যা বাজে মন্তব্য করার আগে কি ডাঃ মুরাদের একটি বার ও কি ভাবা উচিত ছিলনা যে তার ঘরে ও একটি ফুট ফুটে কন্যা সন্তান রয়েছে। জাইমার সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নাই। আর জাইমা রহমান কে জরিয়ে ডাঃ মুরাদ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা যেমন তার বিকৃত মানষিকতার পরিচয় অন্যদিকে তিনি যে সমাজে বর্নবাদ জাতী ও লিঙ্গ বৈষম্যে বিশ্বাসী তার ই প্রমান। ডাঃ মুরাদ জাইমা রহমানকে নিয়ে যে অশ্লীল মন্তব্য করছেন তাতে আমার বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেছে যখন ই ডাঃ মুরাদের সাথে চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপ টি শুনলাম। প্রথমে ঐ কথা গুলি আমি তেমন বিশ্বাস করি নাই কিন্তু যখন চিত্রনায়ক ইমন এই ফোন রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করেছেন তখন ডাঃ মুরাদের প্রতি আমার ঘৃনার পাল্লটা আরো একটু ভারী হয়েছে। তার ঐ ফোনালাপের কথা গুলি তিনি যে একজন দুশ্চরিত্রে বিকৃত যৌন রুচির পরিচয় বহনকারী বলে মনে হয়েছে তেমনি আমাদের প্রসাশনের ভয় দেখিয়ে আমাদের প্রশাসনের সুনামক্ষুন্নের চেস্টা করেছেন। ডাঃ মুরাদের শুধু ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বেগম খালেদা জিয়া জাইমা রহমান বা মাহিয়া মহিয়া মাহির ঘটনাই শেষ নয় তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এখানার করা বিভিন্ন ছাত্রী হোস্টেল বসবাস বরত ছাত্রলীগে বিভিন্ন নেত্রীদের চরিত্রে ও কালিমা লেপন করতে কুন্ঠা বোধ করেন নি। ডাঃ মুরাদের এমন কুকর্মের অভিযোগ এখন ভুরি ভুরি। তবে সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো নাহিদ নামের যেই লোক টি তার ঐ সকল অনুষ্ঠানের উপস্হাপক হিসেবে ছিলেন তিনিও যে একজন মানষিক বিকার গ্রস্হ্য উন্মাদ তার আর বোধ হয় কারো কাছে বলার অপেক্ষা রাখেনা। ডাঃ মুরাদ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও বিভিন্ন কর্মকান্ড জাতি হিসেবে আমাদের বিব্রত করেছে। জানিনা তার সকল কর্মকান্ডে সরকার ও আমাদের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগ কতটুকু বিব্রত হয়েছিল?

বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তাতে ও কম হবে রাজনৈতিক অঙ্গনের সুর্য যার আলোয়ে আলোকিত হয়ে নানান আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ১৯৭১ সালে এই দলের ই প্রধান বাংলাদেশের মানুষের প্রান পুরুষ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব এদেশের আপামর জনসাধারণের অংশগ্রহণে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত ও আড়াই লাখ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময় আমারা স্বাধীনতা অর্জন করলেও কালের বিবর্তনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করা জন্য আজ সেই ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ তার ঐতিহ্য অনেকটাই ধ্বংস করে দিয়েছে। বিভন্ন অযোগ্য মানুষ গুলিকে দল ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে একদিকে যেমন সন্ত্রাস দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে অযোগ্য নেতৃত্বের জন্য দলের ভাবমূর্তি ধ্বংস করছে। অথচ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন উদার মনের রাজনীতি বিদ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলে শিষ্টাচার ও মমতার ঘটতি ছিলনা।

ইতোমধ্যে ডাঃ মুরাদ হাসাকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে দত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আর সেই নির্দেশ মোতাবেক ডাঃ মুরাদ হাসান ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে পদত্যাগ পত্র ও জমা দিয়েছেন। তবে শপথ নিয়ে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা যেই ভাবেই হউক জনগনের পক্ষে আমাদের মহান সংসদের প্রতিনিধিত্ব করা রাষ্ট্রের একজন আইন প্রণেতার মানুষিক ও চারিত্রিক অবস্হা যদি এমন হয় তার জন্য প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ ই কি যথেষ্ট? না মোটেও না। প্রথমত তাকে শিষ্টাচার লংঘন ও শপথ ভঙ্গের জন্য বহিস্কার করাটা ছিল জরুরী সেই সাথে আওয়ামী লীগের মত একটি রাজনৈতিক দলের সাথে এমন একজন দলছুট মানষিক বিকারগ্রস্ত মানুষের সম্পর্ক মানায় না বিধায় তাকে দল থেকে বহিস্কার তার নির্বাচনী এলাকার মানুষ তার কাছে নিরাপদ নয় বিধায় তার ঐ এলাকার সাংসদের পদে থাকার কোন অধিকার আছে বলে শুধু আমি না ঐ এলকার সাধারন মানুষ ও মনেকরেন না তার প্রমান তার পদত্যাগের খবর শোনা মাত্রই ঐ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের আনন্দ মিছিল। তাই এখানে ডাঃ মুরাদের শুধু প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ ই যথেষ্টনা তাকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে বিতারিত করে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্হা টাই হবে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামীলের রাজনৈতিক বিচক্ষণতার প্রমান। এর আগের ও আমরা সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যের কোন এক টক শোতে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করে মালেক বিকৃত মানষিকতার পরিচয় দিলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করা হয় নি। যদি ও মালেকের বিকৃত রুচি অশ্লীল মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করতে আমি মোটেও পিছু হই নি। ঘৃনা নিয়ে তার ঐ বিকৃত রুচির প্রতিবাদ করেছি। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সহেব ও আমাদের মাননীয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কন এক বক্তব্যে কিছু অরুচিকর অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। কোন ব্যক্তি নিয়েই অশালীন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কখমো কোন সভ্য সমাজের মানুষের মুখে মানায় না আর কোন সভ্য সমাজ তা গ্রনহ ও করতে পারে না। ক্রমান্বয়ে আমরা যেন সেই স্হান থেকে অনেক দুরে চলে যেতো শুরু করেছি। আলাল বা মালেকের ঐ ধরনের মন্তব্যের পর বিএনপির ভিতর ৎোকে কোন প্রতিক্রিয়া আমরা দেখিনাই। তবে সিলেটের ছাত্রলীগের কর্মীরা মালেকের বাড়ীতে ভাংচুর করতে ভুলে নাই। আমাদের রাজনীতি বহুদিন আগেই রাজনীতিবিদদের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে নষ্ট মানুষদের দখলে চলে গেছে। রাজনীতি তার সততা শিষ্টাচার হারিয়ে অনেকটাই সন্ত্রাস চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজ আর অসভ্যদের দখলে। এর মাঝে হাতে গনা যেই কজন রাজনীতিবিদ নীতি আর্দশ নিয়ে কোন ভাবে রাজনীতিতে টিকে আছেন তাদের অবস্হা বড়ই করুন। আমাদের রাজনীতিতে মুরাদ মালেকদের মত উচ্ছিষ্ট সুবিধা ভোগী অসভ্যের কমতি নাই । আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক এই দৈন্যদশা দেশের কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকেই কাম্য নয়।

আবরার হত্যার ও অপ্রতিরোধ্য ছাত্ররাজনীতি।

অতিসম্প্রতি বহুল আলোচিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার রায় দিয়েছেন দ্রুতবিচার আদালত। এ মামলায় অভিযুক্ত ২৫ আসামির সবাইকে দোষী সাবস্ত করে ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক আবু জাফর কামরুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। মামলার রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আবরার হত্যার রায়ের পর ই এর পক্ষে বিপক্ষে উত্তাল আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে বেশির ভাই নেটিজেন ই এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে সমর্থন করেছেন। আবার অনেকের প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নিঃসন্দেহে মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছেন বিশ্বসেরা অনেক প্রকৌশলী। আবরার ও মেধাবীদের ই একজন জন। কিন্তু ভগ্যের নির্মম পরিহাস মেধাবী আবরার কে খুন হতে হয় পথভ্রষ্ট বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্রের হাতে। একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার বেশ কয়েক জন নেতা কর্মী অমানুষিক ভাবে আদিমযুগীয় কায়দায় হত্যা করে আবরার কে। আবরারে হত্যাকারীদের বর্তমান আদালতের রায় নিয়ে অনেকেরই মন্তব্য আবরারের মত একজন মেধাবী ছাত্রকে খুনের জন্য ২৫ জন মেধাবীর জীবন নাকি শেষ করে দেওয়া হলো। এই তাদের এই কথার সথে আমি কোন ভাবেই এক মত হতে পারি না বা পারবো না। প্রকৃত মেধাবী কি বাস্তবিক ভাবে কি আমরা সেটাকে উপলব্ধি করতে পারছি। মেধাবী হতে হলে তাকে মননশীল একজন প্রগতিধারার মানুষ হতে হবে পুঁথিগত মেধাই একজন মানুষকে প্রকৃত মেধাবী হিসেবে মাপার এক মাত্র মাপকাঠি নয়। একজন মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এটা তার মৌলিক গনতান্ত্রিক অধিকার। তার সেই অধিকারে কোন মানুষের হস্তক্ষেপ করার অধিকার একটি সুষ্ঠু গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোন নাগরিককে ই দেওয়া হয়নাই। যতক্ষণ না তা ঐ মত রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর না হয়। আর যদি তার সেই মতামত রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য ক্ষতিকর হয় তার জন্য রাষ্ট্রের সঠিক আইনের আওতায় এনে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করা ও রাষ্ট্রের ই দায়িত্ব। আবরারের ফেইসবুক পোস্ট দেখে নাকি তার হত্যাকরী ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের কাছে তাকে শিবির কর্মী হিসেবে মনে হয়েছে আর তারই প্রেক্ষাপটে এমন নৃশংস হত্যাকান্ড। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন বাংলাদেশের রাজনীতিতে কি জামাত শিবিরকে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে? আর যদি কোন সংগঠনের নেতা কর্মী তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে তার জন্য কি কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা কোন সভ্যসমাজের মানুষের কাজ? জামাত- শিবিরের রাজনীতি তো নতুন কিছুই নয়। আজ জামাত- শিবিরের আর্দশের ধারক ও বাহকদের অনেকের ই রাজনৈতিক ভাবে স্হান হয়েছে আওয়ামিলীগে। হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন হওয়ার পর ও ঢাকার শহরের বিভিন্ন দেওয়ালে দেওয়ালে ঝুলতে দেখাযায় হিযবুত তাহরীরের পোষ্টার! আজ পার্যন্ত কত জন হিযবুত তাহরীরে নেতা কর্মীকে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন। আর গ্রেফতার হলে ও তাদের আইনের মাধ্যমে বিচার করেই সাজার মুখোমুখি করতে হবে। অপরাধী যেই হউক ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার এই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ই আছে।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ইতিহাস ঘটলে দেখাযায় ছাত্ররাজনীতিতেই অধিক খুনাখুনি হয়েছে। বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এর তালিকা দীর্ঘ হলেও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ গুলিতে এর সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য। এর আগে ২০০২ সালের ৮ জুন, টেন্ডারবাজিকে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলির মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের মেধাবী ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি। তার মৃত্যুতে সেদিন জ্বলে উঠেছিল গোটা দেশ। শোকে, বেদনায় স্তব্ধ হয়ে যায় সবাই। এর পর ২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের নজরুল ইসলাম হলে ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিগোষ্ঠী হাতুর চাপাতি দিয়ে মাথায় পিটিয়ে গুরুতর আহত করে আরিফ রায়হান দীপকে পরে ২০১৩ সালের ২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে ই মারা যায় দীপ। সনি ও দীপের হত্যাকারীরা আজো বিচারের বাহিরের ই রয়ে গেছে। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে পুরান ঢাকার জজকোর্টের সমনে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয় দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাসকে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া বদৌলতে বিশ্বজিৎ হত্যার ভয়াবহ দৃশ্য সরাসরি দেখতে হয়েছিল বিশ্ববাসীকে। বিশ্বজিৎ হত্যার সাথে ও জরির ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রীলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের ই কয়েকজন। বিশ্বজিৎ হত্যা সম্পর্কে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক ঘাতকরা জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতে তারা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও সেক্রেটারির সঙ্গে গোপন বৈঠক করে। ঐ গোপন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে অবরোধের পক্ষে কেউ মিছিল বের করলে তাদের ওপর হামলা চালাতে হবে। এর পর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, এবং প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। তবে আসামীদের মধ্যে মাত্র আটজন গ্রেপ্তার ছিলেন, এবং বাকি ১৩ জন ছিলেন পলাতক।পরবর্তীতে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৮ জনের মধ্যে ২ জন বেকসুর খালাস, ৬ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং মাত্র ২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট[৮]। সেই সাথে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া দুইজন আসামীকেও খালাস দেওয়া হয়।মূল আসামীদের মধ্যে হাইকোর্টের রায়ের পরে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর সংখ্যা ২১ থেকে ১৭তে নেমে আসে। গ্রেপ্তার হওয়া মাত্র একজনের মৃত্যুদন্ড, এবং ৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড রায় বহাল আছে। বাকি ১৩ জন এখনও পলাতক। রায়ের প্রতিক্রিয়াতে বিশ্বজিতের পরিবারের মত হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ। এর আগের ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের অনেক কুকর্মের কথা জাতিকে নাড়া দিয়েছিল তার মধ্যে ছিল জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা মানিকের ধর্ষন সেঞ্চুরির। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে টিএসসিতে ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে শ্লীলতাহানি শিকার হন শাওন আক্তার বাধঁন নামের এক নারী। পররে দেশের দেশের বিভিনৃন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ হলে তা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে। পরবর্তীতে অভিযোগ নাকি সন্দেহাতীত প্রমাণ করতে না পারায় আসামিদের খালাস দেয়া হলো। অথচ শাওনকে লাঞ্চিত করা সেই ছবি আজো সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ অনলাইনে এখন বিদ্যমান। এই চিত্র যে শুধু আওয়ামীলের তেমন টি নয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকায় প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের ই এমন আমল নামা আছে। এর আগে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্হায় এমন ঘটনা কম ঘটে নি। অধ্যাপক হুমায়ূন আজাদকে কোপানো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আফতাবকে হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ইউনূসকে খুন, চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ তাহের হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের হল সামসুন্নাহার হলে রাতের আধারে ছাত্রদল ও পুলিশের যৌথ হামলা সহ এমন অনেক ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটছে ছাত্রদল ও ছা্ত্র শিবিরের নেতাকর্মীদের দ্বারা। তবে বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামিলীগ দীর্ঘদিন বিভিন্ন কৌশলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে রাকার কারনে তাদের দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীদের আচরন চালচলন এতটাই উগ্র ও অপ্রতিরোধ্য যা দীর্ঘ ৫০ বছরে এমনটা দপশের মানুষ দেখেছে বলে আমার মনে হয় না। বর্তমানে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গ সহ সাধারন মানুষের মাঝে বহুল আলোচিত ব্যক্তি সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান। যদি ও আমার আগে লেখায় তাকে নিয়ে ই অনেকটা ই বলেছি তার পর ও বলছি মুরাদ নিঃসন্দেহে একজন মেধাবী ছাত্র আর মেধাবী বলেই নটরডেম কলেজ ও পরবর্তীতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে লেখা পড়া করে ডাক্তার হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ২০০৮ সালের নবম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের মন্ত্রীসভায় তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। শুরুতে মুরাদ হাসান এতটা অপ্রতিরোধ্য ছিলেন বলে আমার মনে পরে না। কিন্তু যখনই তিনি উপলব্ধি করলেন রাজনীতিতে যতটা অপ্রতিরোধ্য ততোটাই ক্ষমতা। অবশ্য আমাদের মহান সংসদ অধিবেশনে থেকে ও অশালীন কুরুচিপূর্ণ লাগাম মন্তব্য কম শুনতে হয় নি। আমাদের আজকের রাজনৈতিক এমন অশ্রাব্য কথা বার্তা অপ্রতিরোধ্য লাগাহীন ভয়ংকর চালচলন ও কাজ কর্ন তার জন্য যারা করছে তারা না যতটুকু দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী রাজনীতির নামে তাদের ঐ শক্তিতে তারা বলীয়ান করছেন।

এবার আসি আবরার হত্যা নিয়ে আবার হত্যার বিচারের তার পরিবার অসন্তোষ প্রাকশ করলে ও একজন আাসামীর যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পরিবারের পক্ষথেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরবর্তীতে আবরার হত্যাকারিদের চুড়ান্ত বিচার কি হবে তা নিয়ে মনের ভিতর একটা খুট খুট ভাব জন্ম হয় যখন বিশ্বজিৎ হত্যার বিচারের রায় সামনে চলে আসে। বাঁদনের শ্লীলতাহানির বিচারের রায় সামনে চলে আসে। আজ যারা আবরার হত্যাকারীদের মেধাবী বলে প্রশ্ন রাখছেন একজন মেধাবী হত্যার জন্য এত মেধাবীর জবীন কি ধ্বংস হয়ে যাবে? তাদেরকে বলতে চাই পৃথিবীতে অনেক মেধাবীর মেধাই আমাদের মানবতাকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে এনে দিয়েছিল। হিটলার ও কিন্তু কম মেধাবী ছিলেন না। আর আবরারকে যারা হত্যা করছে ওরা কখনোই মেধাবী হতে পারে না। ওরা ভয়ংকর মানুষ রুপী জানোয়ার। আর ঐ সকল জানোয়ার ও তাদের এমন ভয়ংকর কর্মকান্ডে মদদ দাতা ও সৃষ্টিকারীদের যদি উপযুক্ত বিচার কর্যকর করা হয় তা হলে আর কোন আবরারের পরিবারকে চিরদিন শোক কান্না কাঁদতে হবে না। আশা করি আমাদের রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্হা ঐ সকল তথকিত মেধাবী জানোয়ারদের উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে যাথাযথ শাস্তি কার্যকর করে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবেন।

রুপগঞ্জের লাশের কান্না ও আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা।

বাংলাদেশে কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যু এটা আবার নতুন কি!  সাধারন হিসেবে এরা শ্রমিক আর এই শ্রমিকদের কত টুকু মানুষ হিসেবে গন্যকরা হয় এটা ই বড় প্রশ্ন?  গত বছর করোনার শুরুতেই আমরা দেখেছি আমাদের দেশের পোষাক শিল্পের মালিকদের শ্রমিক নামক প্রানীদের নিয়ে নানান খেলা। পোষাক কারখানার কোন এক বহুরুপী মালিক তো তার ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে বলেই ফেললেন তারা নাকি শ্রমিকদের পালেন পোষেন।  তার অর্থ কি দাড়ায়?  এখন ও দেশ যখন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বেসামাল তখন ও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা  না করেই চলছে পোষাক কারখানা গুলি।  শ্রমিকরা ও পেটের তারনায় জীবনকে তুচ্ছ ভেবে ছুটছে কর্ম ক্ষেত্রে।  অথচ সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী প্রত্যেকটি কারখানা মালিকদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে নিজস্ব পরিবহনে শ্রমিকদের আনা নেওয়া করে কারখানা খোলা রাখতে পারবে। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে ই কথাগুলি বলছি।  কারন আমি ও একজন শ্রমিক।  গত ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার   নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের আওতাধীন হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের  কারখানায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাত হয়।  কারখানার ছয় তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন । কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কি করণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, আগুনে পুড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সবমিলে এ পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। সব চেয়ে বেদনাদায়ক হলো মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ও অনেক শ্রমিক ই পরিবারের সদস্যদের কাছে ফোন করে বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল।  কিন্তু অসহায় পরিবারের সদস্যরা তাদে প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে পুরো ই ব্যর্থ হয়েছেন কারন অগ্নিকান্ড শুরু হওয়ার পর ই কারখানা প্রবেশ ও বাহিরের গেইট গুলি তালা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই কারখানা কাজ করা অধিকাংশ ই নাকি ছিল শিশু শ্রমিক। স্বজনদের ভাষ্য অনুযায়ী উদ্ধার করা প্রতিটি মৃতদেহ ই একেকটি কয়লার টুকরো। তার পর ও ডিএনএ টেষ্টের মাধ্যমে নাকি মৃত ব্যক্তিদের সনাক্ত করা হবে। সজীব গ্রুপের কারখানার ঘটনায় বিস্তারিত আসা আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরের ঘটনা একটু স্মরন করার চেস্টা করি।  আমাদের বাংলাদেশের মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই কম আর কম হবেই না বা কেন প্রতিনিয়ত ই এত ঘটনা ঘটছে এর কয়টাই বা মনে রাখা যায়।   তাই কোন ঘটনার ই তেমন কোন প্রতিকার হয় না বলেই ঘটনার তলে চাপা পরছে ঘটনা।  সেই দিন আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায় আগুনে পুরে ১১২ জন শ্রমিক  কয়লা হয়ে গিয়েছিলেন। পরে সেই লাশগুলো উদ্ধার করে নিশ্চিন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সারি সারি করে রাখা হয়। স্বজনরা সেই দিন তাদের প্রিয়জনের মরা মুখটি ও দেখতে পারেন নি। মৃত শ্রমিকদের স্বজনদের  আহাজারিতে সেদিন ভারি হয়ে গিয়েছিল নিশ্চিন্তপুরের আকাশ বাতাস।  তবে সেই কান্না মিশে গেছে আকাশে আর বাতাসে ই ।  সেই কান্না কোন ভাবে স্পর্শ করতে পারেনি আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকা কর্তাব্যক্তিদের। তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায় আগুনে ঘটনার পর যখন আমাদের দেশের সমস্ত সংবাদমাধ্যম এমন কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যখন উত্তাল তখন ও আমরা এই প্রতিষ্ঠানের মালিক দেলোয়ার হোসনকে ব্যাপারটাকে তেম গুরুত্ব সহকারে নিতে দেখিনি।   সরকারের কাছেও ঐ ঘটনার তেমন গুরুত্ব ছিল বলে আমার মনে হয় নাই ।  তাই তো তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায়  অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় কোনো ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্ট করে আসামি না করে একটি যেনতেন মামলা হয়েছিল।  পুলিশ বলেছিল, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর অভিযুক্তদের আসামি করা হবে। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন ও আলোর মুখ দেখেনি। সেই ঘটনার বিচার ও  আজ পর্যন্ত  হয়নি। ঠিক একই ভাবে সজীব গ্রুপের কর্নধার মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও  বলেছেন, ” আগুনের ঘটনার দায় তিনি নেব না। এটা নিতান্তই একটি দুর্ঘটনা। জীবনে বড় ভুল করেছি ইন্ডাস্ট্রি করে। ইন্ডাস্ট্রি করলে শ্রমিক থাকবে। শ্রমিক থাকলে কাজ হবে। কাজ হলে আগুন লাগতেই পারে। এর দায় কি আমার? আমি তো আর গিয়ে আগুন লাগাই নাই। অথবা আমার কোনো ম্যানেজার আগুন লাগায়নি। শ্রমিকদের অবহেলার কারণেও আগুন লাগতে পারে, এই দায় আমার না। ” হাসেম সাহেব একদম সত্য কথা বলেছেন তিনি তো আর আগুন লাগাননি তার কারখান।  শ্রমিকদের অবহেলায় কারনে আগুন লাগতে পারে তা ও মেনে নিলাম ।  কারন কারখান থাকলে শ্রমিক থাকবে শ্রমিক থালে শ্রমিদের অবহেলাও থাকতে পারে।  সর্বোপরি কারখানা থাকলে অগ্নিকান্ডে সহ যে কোন অঘটনা ঘটবে এটা স্বাভাবিক।  তবে কোন কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্হা থাকবে না বা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ভিতরে অবস্হানরত শ্রমিকদের দ্রুত বের হওয়ার জন্য কোন জরুরি সিঁড়ি থাকবে না।  সর্বোপরি শ্রমিকদের নিরাপত্তা কোন ব্যবস্হা থাকবে না এমন কি অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনের মুল ফটক বন্ধকরে দিবে তা তো হতে পারে না।  তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডর কারখানায়  অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এত শ্রমিকের মৃত্যুর পর ও আমরা একই কাহিনী শুনেছি আট তলা কারখানা ভবনে ছিল না কোন অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্হা ছিলা কোন জরুরী ভিত্তিতে বের হওয়ার কোন সিঁড়ি বা দরজা এমন কি অগ্নিকাণ্ডের সুত্রপাতের পর ই নাকি কারখামার মুল ফটক তালাবন্ধ করে শ্রমিকদের আটকে দেওয়া হয়েছিল। তাই তাজরীনের অগ্নিকাণ্ডের  ঘটনার সাথে হুবহু মিল আছে  হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের  কারখানার অগ্নিকান্ডের ঘটনার।

২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলী নিমতলী ট্র্যাজেডির কথা ও আমরা সবাই ভুলে গেছি। ঐ দিন এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জন তরতাজা মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিল। হয়তো অনেকেই বলবেন কিভাবে ভুললাম প্রতিবছর তো ঐ দিনটি আসলে সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে নানান প্রতিবেদন হয়।   এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির বিশেষজ্ঞরা তখন সরকারের কাছে  ১৭টি সুপারিশ পেশ করেছিলেন, যার প্রথম সুপারিশ ই  ছিল পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্হান থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো সরিয়ে নেওয়া। বাকি ১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ওপর। কিন্তু, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের যথাযথ পদক্ষেপ আজো নেয়া হয় নাই বলেই গত ২৩ এপ্রিল ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে আরমানিটোলার হাজী মুসা ম্যানসনের নীচতলায় রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকেই জীবন দিতে হয়েছে আবার কেউ আগুনে দগ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেছেন । এর আগে ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়ানক আরেক অগ্নিকাণ্ডের জীবন দিতে হয়েছিল ৭৮ জন মানুষকে । কারণ ঐ এলাকার প্রতিটি বাড়ীতেই ছিল সেই রাসায়নিক গুদাম । ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েলস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৪১ জন। ঘটনার পর জানা যায়, এই কারখানা ভবনের ইমরাত নির্মাণের যে লে-আউটের অনুমোদন নিয়েছিল, তা তারা কোন ভাবে অনুসরণ করেনি। ছিল না কোন অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্হা বা জরুরী নির্গমন সিঁড়ি। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর ঢাকার অদূরে কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় প্রাইম প্লেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগলে ১৩ জন মারা যান। ঐ ঘটনার পর জানাজায় ঐ কারখানার কোন অনুমতি না নিয়েই কোন আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই কার্যকর চালাচ্ছিলেন।  এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ২২তলা ভবন এফআর টাওয়ারে আগ্নিকান্ডে  ২৬ জনের মৃত্যু হয়৷ পরে জানাজায় রাজউক থেকে ১৮ তলা ভবনের অনুমতি নিয়ে ২২ তলা হয়ে স-গৌরবে রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে দাড়িয়ে ছিল এফআর টাওয়ার।

বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলংকময়  ঘটনার নাম রানাপ্লাজা তথাকথিত  দুর্ঘটনা ।  বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা। এ দূর্ঘটনায় প্রায় বারোশত  জন শ্রমিক নিহত এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। রানাপ্লাজার ঘটনার পর সারা পৃথিবী পমন শোকাহত হয়েছিল তার পর ভেবেছিলাম আমাদের সরকারে কর্তাব্যক্তিদের ভিতর হয়তো মানবতা জাগ্রত কিন্তু তা না হয়ে আমরা দেখেছি ভিন্ন চিত্র। রানাপ্লাজা ধসের দিন বিএনপির হরতাল কর্মসূচি ছিল আর এই ভবন ধসের দায় বিএনপির কাধে চাপানোর জন্য  তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেছিলেন , ‘‘কিছু হরতাল সমর্থক ভবনটির ফাটল ধরা দেয়ালের বিভিন্ন স্তম্ভ এবং গেট ধরে নাড়াচাড়া করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন৷ ভবনটি ধসে পড়ার পেছনে সেটাও একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে৷” যদি এই কথা বলে দেশের মানুষের কাছে হাসির পাত্রে পরিনত হয়েছিলেন তিনি। পরে যদিও অনেক নাটকীয় ভাবে গ্রেফতার করা হয় রানাপ্লাজার মালিক সোহেল রানাকে। এর পর থেকে সোহেল রানা এখনো কারাগারে বন্দি।  রানাপ্লাজার দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের সহযোগিতার জন্য দেশ বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন সহযোগিতার বেশির ভাগই নাকি চলে গেছে রাঘব বোয়ালদের পেটে। অসহায় শ্রমিকদের ভাগ্য সেই নির্মম পরিহাসের ই শিকার। সজীব গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান  হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকেই আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এ্যক্টিভিষ্টরা খুবই সজাগ।  আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিপরিচিত মুখ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ফেইসবুক লাইভে এসে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন।  তবে তার লাইভে তিনি এই ঘটনাকে ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা ও কম করেন নাই ।  তার লাইভের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ” এই সেজান জুস নাকি পাকিস্তানি প্রডাক্ট। পাকিস্তান একাত্তর সালে যন্ত্রণা দিয়েছে, এখনও যন্ত্রণা দিচ্ছে। ” আমার মোটেও বোধগম্য নয় কেন ব্যারিস্টার সুমনের এমন মন্তব্য।  এই সেজান জুস পাকিস্তানি পন্য হলে ও এর পরিচালনার দায়িত্বে বাংলাদপশের ই মানুষ।  তাই পন্যের কোন তো আর দোষ হতে পারে না।  রানাপ্লাজার মালিক কিন্তু আওয়ামীলীগের ই একজন ছিলেন।  রাজনৈতিক ক্ষমতার আপব্যবহার করেই একজন সাধারন সোহেল রানা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে সরকারের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে রানাপ্লাজা গড়ে তুলে ছিলেন। তাজরীনের মালিক সহ এমন সব ঘটনায় যেসব ব্যক্তিরাই জড়িত তারা কেউই ভিনদেশী নন।

 স্বাভাবিক ভাবেই একটি কারখানা স্হাপনের আগে আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কতৃপক্ষের কাছ থেকে বিভিন্নধরনের ছাড়পত্র নিয়েই কারখানা কার্যক্রম শুরু করতে হয়। এবং একটি কারখানায় কিছুদিন পর পর সেই সকল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হলো পরিদর্শন করে সব ঠিকঠাক আছে কি না তার তদারকি করা। তারমধ্যে বিশেষ করে রয়েছে কল-কারখানা পরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তর, ফায়ার ব্রিগেড,  পরিবেশ অধিদপ্তর এমন কি বিশ্বের উন্নত দেশে স্বাস্থ্য বিভাগ ও কারখানর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বে থাকেন। তবে সবচেয়ে বড় পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের দেশে প্রত্যেকটি দুর্ঘটনা ঘটার পর ই জানা যায় নানান ত্রুটির কথা। লঞ্চ ডুবলে ঘটনার পর জানা যায় লঞ্চের অনুমোদন নেই। ভবনে আগুন লাগলে জানা যায় অনুমোদন নেই। গাড়ি দুর্ঘটনার পর জানা যায় ফিটনেস নেই ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই । কারখানায় দুর্ঘটনার পর জানা যায় ওখনে কারখানার অনুমতি নেই কারখানর ভিতরে কোন নিরাপত্তার ব্যবস্হা নেই। অথচ তদারকের দায়িত্বে থাকা নানা কর্তৃপক্ষ কিন্তু ঠিকই  আছে!সজীব গ্রুপের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর আমরা জানতে পারলাম কারখানা পরিদর্শক   নিয়মিত প্রতিবেদন দিয়ে গেছেন ফ্যাক্টরি চালানোর উপযুক্ত বলে।অনেকগুলো লাইসেন্স ইতিমধ্যে মেয়াদ শেষ হয়েছে কিংবা ছিলই না গত কয়েক বছর। তার সাথে আগেই তো বলেছি ঐ কারখানায় অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্হা ও জরুরি নির্গমনেরবও কোন রাস্তা ছিল না। আমাদের দেশের শ্রম আইনে দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর জন্য ক্ষতি পুরন মাত্র ২ লাখ টাকা।  যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।  যদিও রানাপ্লাজা ঘটনার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য যে কমিটি গঠন করা হয় সেই কমিটি ১৭-২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরণ প্রদানের সুপারিশ করেছিলেন। জীবনের ক্ষতিপূরণ কখনোই অর্থ দিয়ে মোটেও সম্ভব না।  তার পর ও যদি সেটা কোন দুর্ঘটনা হয় তা হলে হয়তো মেনে নেয়া সম্ভব।  কিন্তু যদি সেটা কোন ইচ্ছাকৃত অবহেলায় স্বার্থ রক্ষার জন্য হয় তা হলে সেটা কখনোই দুর্ঘটনা নয় সেটা অবশ্যই হত্যাকান্ড।  কিন্তু আজো আমাদের দেশে এই সকল হত্যাকান্ডের কোন বিচার হয় নি। কারন এর সাথে জরিত দেশের রাঘব বেয়ালেরা আর ঘটনার শিকার হন তথাকথিত মানুষের নামের শ্রমিকেরা। সজীব গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যদি ও ইতোমধ্যে সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম সহ আট জনকে গ্রেফতার করে পুলিশি রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।  তবে এই ঘটনার জন্য কি শুধু তারাই দায়ী?  না মোটে ও না। যাদের দায়িত্ব ছিল কারখানার সমস্ত কিছু ঠিক আছে কি না তা সঠিক ভাবে তদারকি করা।  তারা কিন্তু সেই দায়িত্ব

মাসোহারার বিনিময়ে কাগজে কলমে পালন করলেও বাস্তব চিত্র ছিল তার উল্টো।  তাই এই ঘটনার জন্য সজীব গ্রুপের মালিক ও কর্মকর্তারা যেমন দায়ী তাদের চেয়ে ও বেশি দায়ী সে খানকারর কলকারখানার পরিদর্শক, শ্রম অধিদপ্তরের পরিদর্শক ও ফায়ার ব্রিগেডের যারা দায়িত্বে ছিলেন যারা কারখানার ভিতরের সম্পুর্ন নিরাপদ কর্মপরিবেশ আছে কি না তা নিশ্চিত করার দায়িত্বে যারা ছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ভাবে সব সময় ই ঐ সকল দুর্নীতিগ্রস্হ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ষার চেস্টা করা হয়। পুর্বের ঘটনার  থেকে আমরা  এই ঘটনার ও ভবিষ্যৎ ও ধারনা করতে পারি।  বড় জোড় সপ্তাহ খানেক আমাদের আবেগ কিছুটা কাজ করবে।  এর আবার নতুন কোন ঘটনার চাপায় পরে যাবে এই ঘটনা।  তবে যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হবে ততো দিন পর্যান্ত আমাদের এমন যন্ত্রণাদায়ক ঘটনার মুখোমুখি হতেই হবে।

কারাগার তুমি কার?

কারাগার ইংরেজিতে যাকে প্রিজন আর প্রাচীন ফরাসি প্রিসাউন বলা হয়। কারাগার কী, এটা নিয়ে আর বিশদ বলার কিছু নেই। সবারই জানা আছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কারাগারের সঙ্গে আমাদের দেশের কারাগারের বিশল তফাত। আমাদের কারাগারে বন্দিদের মূল্যায়ন করা হয় তাদের অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার মাধ্যমে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারাগারে বন্দিদের মূল্যায়ন করা হয় তাদের অপরাধের বিবেচনায়। সম্প্রতি আমাদের কারাগারে বন্দি ব্যবস্থা আবারো আলোচনায় এসেছে। ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড বাংলাদেশের একটি বহুল আলোচিত বিতর্কিত এমএলএম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যা পনজি স্কিম নামক প্রতারণামূলক পদ্ধতিতে ব্যবসা পরিচালনা করত। যার বিরুদ্ধে এদেশের লাখো বেকার মানুষকে মিথ্যা স্বপ্নের প্রলোভন দেখিয়ে লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। ধ্বংস করে দিয়েছে লাখো মানুষের স্বপ্ন, পথে বসিয়েছে লাখো পরিবারকে। বিতর্কিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের গ্রেফতার করে বিচারের জন্য জেলে পাঠানো হয় ২০১২ সালে। এই জেলখানা ডেসটিনির কর্তাব্যক্তিদের জন্য কি সত্যি জেলখানা নাকি আরাম-আয়েশ ও নতুনভাবে ব্যবসা পরিচালনার জায়গা? না, এই জেলখানা মোটেও তাদের জন্য স্বাভাবিক জেলখানা নয়। তার প্রমাণ আমাদের গত কয়েক দিনের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কিছু সংবাদ।

https://googleads.g.doubleclick.net/pagead/ads?client=ca-pub-4937852533832826&output=html&twa=1&slotname=4930597011&adk=981411810&adf=894563862&pi=t.ma~as.4930597011&w=360&lmt=1625512450&armr=1&psa=1&format=auto&url=http%3A%2F%2Fwww.kholakagojbd.com%2Fpublic-opinion%2F80515&ea=0&flash=0&fwr=1&rs=1&rh=90&rw=360&resp_fmts=3&sfro=1&wgl=1&dt=1625512447812&bpp=17&bdt=2262&idt=2764&shv=r20210630&ptt=9&saldr=aa&abxe=1&cookie=ID%3D43f582eb610fa787-2298c0082cca00f7%3AT%3D1625462708%3ART%3D1625462708%3AS%3DALNI_MZDgPKZeL47-xNZbOIMvW9TePvSNg&prev_fmts=auto&correlator=2871913885875&frm=20&pv=1&ga_vid=2112331557.1625462707&ga_sid=1625512451&ga_hid=1842258133&ga_fc=0&u_tz=360&u_his=1&u_java=0&u_h=800&u_w=360&u_ah=800&u_aw=360&u_cd=24&u_nplug=0&u_nmime=0&adx=0&ady=1687&biw=360&bih=672&scr_x=0&scr_y=322&eid=31060972%2C31060474%2C31061217%2C31061661&oid=3&pvsid=3125787921703311&pem=790&ref=http%3A%2F%2Fm.facebook.com%2F&eae=2&fc=896&brdim=0%2C0%2C0%2C0%2C360%2C0%2C360%2C672%2C360%2C672&vis=1&rsz=%7Co%7CeEbr%7C&abl=NS&fu=0&bc=23&ifi=2&uci=a!2&btvi=1&fsb=1&dtd=2784

ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন দীর্ঘ তিন মাস ধরে শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে অবস্থান করছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে; আর সেখানে বসেই অনলাইনভিত্তিক অ্যাপস জুমের মাধ্যমে প্রায় পাঁচশত কর্মী নিয়ে নিয়মিত ব্যবসায়িক মিটিং পরিচালনা করতেন এবং নতুন এমএলএম কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। রফিকুল আমিনের সেই ব্যবসায়িক মিটিংয়ের কথা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে সরকারসহ কারা কর্তৃপক্ষ একটু নড়েচড়ে বসে। ইতোমধ্যে ৪ প্রধান কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত ও ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। সেই সঙ্গে রফিকুল আমিনকে হাসপাতালে প্রিজন সেল থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে পাঠানো হয়।

আমাদের দেশে কারাগারের এমন চিত্র নতুন নয়। এর আগে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত আসামি চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি খলিলুর রহমানের ছেলে ইয়াসিন রহমান টিটুর কথা সকলেরই জানা। ১৯৯৯ সালের ৯ জুন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে জিবরান তায়েবীকে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডের চুংকিং রেস্টুরেন্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ হাইকোর্ট ওই মামলার রায়ে অন্যতম আসামি ইয়াসিন রহমান টিটুকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। রায় ঘোষণার সময় তিনি যুক্তরাজ্যে ছিলেন। চার বছর পর ২০১১ সালে দেশে ফিরে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাভোগ শুরু করেন। অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এক বছরের বেশি সময় তিনি হাসপাতালে কাটান। পরে এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হলে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর কারাগারে ডিভিশন নিয়ে আয়েশি জীবনযাপনই করছিলেন টিটু। এমনকি কারাগারে বসেই দীর্ঘদিন ধরে নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য তত্ত্বাবধান করছেন। তবে হত্যা বা এ জাতীয় নৃশংস অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সাধারণত ডিভিশন পাওয়ার কথা নয়। তবে কথায় আছে, টাকার জোরই আজকাল বড় জোর। এই বছর জানুয়ারিতে টিটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে কারাগারের ভিতরেই কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কেওয়াই স্টিলের ব্যবসায়িক নীতিনির্ধারণী সভা করার। এই সভা চলাকালে প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে কারাগারের ভিতরেই মারধরের অভিযোগও তোলা হয়েছে টিটুর বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এই সভা আয়োজন করা হলেও সেদিন ‘মারধরের শিকার’ কেডিএস গ্রুপের কেওয়াই স্টিলের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মুনির হোসেন খান এই কিছুদিন আগে এই নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন। পুরান ঢাকার সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিম কারামুক্ত হওয়ার পর তার গোঁফের স্টাইল ও রাজকীয় বেশভুষাই প্রমাণ করে কারাগারে তার আয়েশি জীবনের অবস্থা।

হলমার্ক গ্রুপের অর্থ কেলেঙ্কারি একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। দেশে অনেক কর্তাব্যক্তিদের সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংকের হোটেল শেরাটন শাখা থেকে হলমার্ক ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। পরে এই ঘটনায় হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তানভীরের স্ত্রী জেসমিন ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (জিএম) তুষার আহমেদসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদমাধ্যমে আমরা দেখেছি, যেখানে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে আনা-নেওয়া করার কথা, সেখানে তানভীর ও তার স্ত্রী জেসমিন ব্যক্তিগত মাইক্রোবাসে চেপে কারাগার থেকে আদালতে আসা-যাওয়া করতেন! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন, তারা কি কারাগারে ছিলেন নাকি নিজ বাসায়ই অবস্থান করেছেন? আর গত কয়েক দিন আগে তুষারের ঘটনা তো রীতিমতো ব্যাপক আলোচনায় জন্ম দেয়। গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বিধি লঙ্ঘন করে এক নারীর সঙ্গে একান্ত সময় কাটিয়েছেন তুষার। এতে কারাগারেরই দুই কর্মকর্তা কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রতœা রায় ও ডেপুটি জেলার গোলাম সাকলায়েন সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ৬ জানুয়ারি ২০২১ কারাগারের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশনের (সিসিটিভি) ক্যামেরায় এ চিত্র ধরা পড়েছে।

এর আগে কোনো জটিল রোগ ছাড়াই টানা দীর্ঘ ২০ মাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এই খবর প্রকাশ পাওয়ার পর তাকে হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। যদিও রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় কারাগার থেকে মুক্তি পান এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। ওই একই সময় আমরা দেশের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী আমিন হুদার বেলায় একই ঘটনা দেখেছি। যদিও আমিন হুদা পরে জেলখানাতেই মৃত্যুবরণ করেন। দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী অনেকেই জেলখানায় থেকেও তাদের সন্ত্রাসের সাম্রাজ্য ঠিকভাবেই রক্ষণাবেক্ষণ করার অভিযোগ আছে। কারাগারে বসেই হত্যা চাঁদাবাজি সবই নাকি করছেন তারা। টাকা হলে নাকি আমাদের দেশের কারাগারের কয়েদিদের সবই মেলে। এর আগে চট্টগ্রামের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ২১ মামলার আসামি হামকা বাহিনীর প্রধান নুরুল আলম চট্টগ্রাম কারাগারে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে বলে তথ্য পেয়েছেন পুলিশ। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ইয়াবা এবং গাঁজা কারারক্ষীর মাধ্যমে নেওয়া হতো কারাগারের অভ্যন্তরে। এমন ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গত ডিসেম্বরে কারাগারের ভিতরে সব ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে আটটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ ও আমাদের সরকার সব সময়ই এই নিয়ে কেন যেন উদাসীন।

কারাগারে কিছু বন্দি আয়েশি জীবনযাপন করলেও অধিকাংশ বন্দিই তাদের ন্যূনতম প্রাপ্যটুকু থেকেও বঞ্চিত। এই বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ। গত বছর মে মাসে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গ্রেফতার হন লেখক মুশতাক আহমেদ ও জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর। লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর যখন সারা দেশ এর প্রতিবাদে উত্তাল তখন এক রকম বাধ্য হয়েই কারাগারে বন্দি অসুস্থ কার্টুনিস্ট কিশোরকে জামিন দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে অসুস্থ কিশোরকে চোখ-কানসহ অন্যান্য চিকিৎসার জন্য থাকতে হয় হাসপাতালে। বাংলাদেশে কারাগারে মৃত্যু একটা স্বাভাবিক ঘটনা। আর কারাগারে মৃত্যুর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারা কর্তৃপক্ষ স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃতের পরিবার এই মৃত্যুকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে মেনে নিতে মোটেও রাজি নয়। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কারাগারে ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, গত ৫ বছরে জেলখানায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৩৩৮ জন বন্দি। কারাগারে একজন রোগী অসুস্থ হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে খুব একটা আমলে নেয় না কারা কর্তৃপক্ষ। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়। জেলখানাতে একটা হাসপাতাল থাকলেও সেখানে থাকতে হলে চিকিৎসা নিতে হলে টাকা থাকতে হবে। হঠাৎ যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে পারমিশন লাগবে। সেই পারমিশন নিতে নিতে যদি কেউ মারা যান, তাহলে বলা হবে স্বাভাবিক মৃত্যু।

জাহালমের কথা হয়তো আমরা ভুলেই গিয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এক মামলার তদন্তের গাফিলতির প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় তাকে। পরে যদিও এই নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম। অথচ আমাদের কারাগারগুলোতে এমন অনেক জাহালমই আছেন যারা বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ বিনা অপরাধে ও বিনা বিচারে কারাগারে বন্দিজীবন পার করছেন। অবশ্য এর জন্য কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের বিচারব্যবস্থার দায়ও কম না। কারাগার অপরাধীকে শুধু বন্দি করে সাজা ভোগের স্থানই নয়, কারাগার একজন অপরাধীর ভিতরে অপরাধবোধ জন্ম দিয়ে সংশোধনের জায়গা। যাতে অপরাধী কারাগার থেকে বেরিয়ে সমাজের মূলধারার মানবিক হয়ে বাঁচতে পারে। অথচ আমাদের দেশে কারাগার থেকে বের হয়ে একজন অপরাধী আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। কারণ কারাগারই অপরাধের স্বর্গরাজ্য। দেশের কারাগারগুলো এতটাই নাকি দুর্নীতিগ্রস্ত যে অনেকেই কথায় বলে, আমাদের দেশের কারাগারের ইট-পাথর সবই নাকি টাকার জন্য হা করে বসে থাকে। তাই কারাগারগুলো বিত্তবান প্রভাবশালী অপরাধীদের জন্য আরাম আয়েশের স্থান আর সাধারণ কয়েদিদের জন্য দুনিয়াবি জাহান্নাম।

ত্ব-হার নিখোঁজ হওয়া ও পরীমনির কান্না আর কত দিন ?

আমাদের দেশ আস্তে আস্তে এমন এক পর্যায়ে চলে আসছে প্রতি মুহুর্তে ই কোন অঘটন অঘটনের জন্ম নিচ্ছে বা জন্ম দিচ্ছি।  তাই কোনটা রেখে কোনটার আলোচনা করবো বা কোনটা নিয়ে ভাববো তা খুবই মুশকিল।  যদিও প্রতিটি ঘটনা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্ব বহন করে তার পর ও কোন ঘটনাকেই আমরা গুরুত্ব সহকারে নিতে পারছিনা বা গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছি আর এ ই হচ্ছে সকল অঘটনের অন্যতম মুল কারণ। অতিসম্প্রতি সোস্যাল মিডির জনপ্রিয় তরুন ইসলামী আলোচক আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান  তার গাড়ীর চালক ও দুই সঙ্গী সহ হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছেন রাজধানীর ঢাকার রংপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গাবতলী বা তার আশপাশ থেকে। আদনান ও তার সহযোগিদের নিখোঁজ হওয়ায় তাদের পরিবার খুবই উদ্বিগ্ন আর এটাই স্বাভাবিক। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আদনানের পরিবার প্রশাসনের বিভিন্ন দরজায় ধন্যাদিয়ে ও তেমন কোন সহযোগিতা ই পায় নি। আদনান ও তার সঙ্গীদের নিখোঁজের ব্যাপারে আদনানের পরিবার থেকে ঢাকার শহরের কয়েকটি থানা সাধারন ডায়েরি করতে গিয়ে নাকি কোন সাধারন ডায়েরি করতে পারেন নি। অবশেষে আদননানের পরিবার রংপুর সদর থানায় একটি জিডি করতে স্বার্থক হয়েছে । আদনান যখন নিখোঁজ এমন সংবাদ প্রচার হওয়ার পর সাধারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভুমিকা কি হওয়ার কথা ছিল?  একটি স্বাধীন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রতিটি নাগরিকের জান মালের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্র তথা সরকারের পক্ষে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। কিন্তু আমাদের দেশে সর্বক্ষেত্রে এমন টি ভাবা আকাশ কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। যাই হউক আদনান ও সঙ্গীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা শোনার পর থেকেই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব ছিল তাদের উদ্ধারে জোর তৎপর হওয়া কিন্তু সেটা না হয়ে আদনানের পরিবারকে সাধারন ডায়েরি করতে ঢাকা রংপুরের তেলেসমাতি দেখতে হলো। বাংলাদেশে গুম বা নিখোঁজ হওয়া নতুন কিছুই নয় তবে গত কয়েক বছর যাবৎ এক ভয়াবহ আতংকে পরিনত হয়েছে গুম ও নিখোঁজে ঘটনা।  বিগত কয়েক বছরে গুম বা নিখোঁজ হওয়া কেউ কেউ জীবন নিয়ে ফিরে এসেছেন পরিবারের কাছে আবার কেউ লাশ হয়ে কারো আবার সন্ধান আজো মিলেনি।  বর্তমান আওয়ামী জোট সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনে  রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালের ২৫ জুন রাতে বিএনপির ঢাকা মহানগরের নেতা ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের রমনা-শাহবাগ এলাকার সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন। দীর্ঘদিন পার হলেও আজো চৌধুরী আলমের কোন সন্ধান পাননি তার পরিবার।  যদি ও তার পরিবারের দাবী যে চৌধুরী আলমের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর অংশগ্রহণ আছে। এর পর ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল মধ্যরাতে ঢাকা থেকে গাড়ির চালক আনসার সহ নিখোঁজ হন বিএনপি নেতা সিলেট- ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী।  দীর্ঘদিন পার হলেও আজো বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ির চালক আনসারের কোন সন্ধান দিতে পারে নি আমাদের সরকার।  ২০১৩ সালে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার অন্যতম সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি। যদি পরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতার দমদম কারাগারে বন্দী অবস্থায় সন্ধান মিলে।  ২০১৫ সালের ১০ই মার্চ রাতে ঢাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদ। নিখোঁজের দুই মাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলেং সন্ধান মিলে সালাহউদ্দিন আহমদের।  ২০২০ সালের ১০ মার্চ হাতিরপুলের নিজ পত্রিকা কার্যালয়ের সামন থেকে নিখোঁজ হন সাংবাদিক ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজের  ৫৩ দিন পর বেনাপোল সীমান্তের কাছে থেকে তাকে আটক করে বিজিবি।  তবে শফিকুল ইসলাম কাজল  সংবাদমাধ্যম কে বলেছেন, ‘‘বেনাপোলে ছেড়ে দেয়ার আগ পর্যন্ত ৫৩ দিন আমার চোখ বাঁধা ছিল, মুখ আটকানো ছিল আর হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ৷  এর আগে আমরা ২০১৭ সালের ৩ জুলাই ঢাকার শ্যামলীর আদাবরের নিজ বাড়ি থেকে ভোর পাঁচটার দিকে কলামিস্ট, লেখক ফরহাদ মজহারকে নাকি অপহরণ করা হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যশোরের অভয়নগরে একটি বাস থেকে উদ্ধার করে। আমাদের দেশে বিগত দিনের এই নিখোঁজের তালিকা অতিদীর্ঘ।  যদি ও আমাদের সরকার বরাবর ই বলে আসছেন বাংলাদেশে গুমের মত কোন ঘটনা ঘটছে না।  তবে আমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন গুলি সরকারের এই দাবী বরাবরই প্রত্যাখান করে আসছেন।  মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১১ জন গুম হয়েছেন। গত বছরের আগস্ট মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য ছিল, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গুম হওয়া ৫৩২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে। কে কীভাবে গুম হয়েছিলেন, তারও বিস্তারিত সেখানে আছে। আমার বিশ্বাস আবু ত্ব-হা আদনান গুম হয়নি।  তবে তিনি তার সঙ্গীদের নিয়ে যে আত্মগোপনে চলে গলেছেন এটা ও মানতে পারছি না।  আবু ত্ব-হা আদনানের পরিবার থেকে বরারবরই বলে আসা হচ্ছে যে তিনি কোন রাজনৈতিক দল বা কোন ধর্মীয়  সংগঠনের সাথে জড়িত নন।  জানিনা কেন তারা বার বার এমন কথা বলছেন?  হয়তো পুর্বের অনেক ঘটনার কারনে তাদের ধারনা সরকারি দলের বাহিরে ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সাথে জড়িত থাকলে হয়তো অন্য কিছু হতে পারে।  আদৌ কি তাই একটি স্বাধীন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক।  এর আগে ও ২০১৮ কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া আটক নেতা রাশেদের মা ও স্ত্রীকে এই এমনই কথা বলতে শুনেছি যে রাশেদ বা তার পরিবারের কোউ কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত না। এমন কথা কি প্রমান করে যে বাংলাদেশে ভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন বা দল করা ই একটা অপরাধ? জানিনা আদনান এখন কোথায় আছে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ই বা আদনান কে উদ্ধারের জন্য কতটা তৎপর এর কতটুকু ই বা অগ্রগতি হয়েছে।  তবে আদনানা তার মায়ের কোলে ফিরে আসবে একজন নাগরিক হিসেবে এটাই প্রত্যাশা। 

পরীমনির বাংলাদেশের এই সময়কার একজন জনপ্রিয় ও আলোচিত অভিনেত্রী। অতিসম্প্রতি তার ভেরিফাইড ফেইসবুক আইডি থেকে এক স্ট্যাটাসে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে জানান তার উপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছে তাকে ধর্ষন ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।  তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে চাইলে এমন কি  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেককেই ঘটনা অবহিত করলে ও তার কোন প্রতিকার পান নি।  ঘটনাটি সত্যি বেদনা দায়ক একজন নারী শারীরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হবেন তাকে ধর্ষন ও হত্যার চেষ্টা করা হবে তা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।  তাই এই ঘটনার সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পাওয়ার পর ই সংবাদ কর্মীরা ছুটেযান পরী মনির বাসায় ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ পায় আমাদের মুল ধারার সংবাদমাধ্যমে।  এর পর ই এই ঘটনা নিয়ে হৈচৈ শুরু হয় রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে।   পরের দিন পরীমনির করা মামলার প্রধান আসামী জাতির পার্টির ( জাপা)  প্রেসিডিয়াম সদস্য উত্তরা ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও উত্তরা বোট ক্লাবের সদস্য নাসির ইউ আহমেদ ও  তুহিন সিদ্দিকী অমিকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। অবশ্য পুলিশের এই তৎপরতায় পরীমনি বর্তমানে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। পরীমনির এই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার সংবাদকর্মীরা সহ সমাজের তথাকথিত প্রগতিশীল ও নারীবাদীদের একটি বিরাট অংশ ক্ষোভে ফেঁটে পরেন।  এমন একটি ঘটনায় সবার ভিতর ই ক্ষোভের জন্ম নেয় সবাই এই ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হবে এটাই প্রত্যাশা করেন।  আমি একটু আগে প্রগতিশীল এবং নারীবাদীদের একটি অংশকে তথাকথিত বলে উল্লেখ করেছি এই নিয়ে হয়তো আমাকে কেউ অন্য ভাবে দেখতে পারেন।  এই তো কিছু দিন আগে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় মারা গেছেন কলেজ ছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়া। মুনিয়া মৃত্যুর কারন হিসেবে তার বড় বোন নুসরাত জাহাম বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে অনেক দেনদরবার করে  আত্মহত্যায় প্ররোচনার’ মামলা করেন।  এর পর ও ঐ মামলা সম্পর্কে মুনিয়ার বড় বোন মামলার বাদী নুসরাত জাহান বলে আসছেন, এটা আত্মহত্যা, নাকি হত্যা- সেটা তদন্তেই বেরিয়ে আসবে। ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে মুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন দেশের অন্যতম ব্যাবসায়ী গ্রুপ বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন মুনিয়াকে। যাই হউক ইতোমধ্যে মুনিয়ার মৃত্যু ঘটনা মাটি চাপা পরে গেছে।  সায়েম সোবহান আনভীর ইতোমধ্যে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও দেশসেরা একটি ক্রীড়া সংগঠনের চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত হয়েছেন। পুলিশের চোখে আনভীর পালাতক থাকলে ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এর নেতারা কিন্তু ঠিক ই তাকে খুঁজে বের করে অভিনন্দন জানাতে ভুল করেন নি।  মুনিয়ার মৃত্যুর পর আমাদের দেশের সাংবাদিক সংবাদমাধ্যম প্রগতিশীল ও নারীবাদীদের ভিতর একটা বিরাট পরিবর্তন দেখেছি।  এই ঘটনার পর তারা সুখ নিদ্রায় চলে গিয়েছিলেন।  মুনিয়া ও যে পিতা-মাতা হারা একজন মুক্তিযোদ্ধার অসহায় অল্পবয়সী মেয়ে তা তারা কোন ভাবেই খেলাই আনতে পারেন নি।  ওটা ও যে একটা অন্যায় ছিল তা তারা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন।  আনভীরে বাবার টাকা যেন সবাই কে স্মৃতিশক্তি হীন বানিয়ে ফেলেছিল।  আজ দেখছি অনেক তথাকথিত নারীবাদীরা পরীমনির জন্য কত করুনা করে কলম ধরেছে প্রতিবাদে ফেঁটে পরছেন!  হ্যাঁ পরীমনির সাথে যদি অন্যায় হয়ে থাকে তার প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে শত বার করতে হবে হাজার বার করতে হবে।  যতক্ষণ না অপরাধীর বিচারের মাধ্যমে সাজা না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত অন্যায়ের প্রতিবার করতে ই হবে। তবে তখনই প্রশ্ন সমালোচনা হয় যখন আপনরা আপনাদের প্রতিবাদকে আপনাদের ব্যক্তি সুবিধা হাসিলের চাবি কাঠিতে পরিনত করেন। এর আগে আমরা দেখেছি একটি টেলিভিশনের টকশোতে  নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন দেশের  খ্যাতনামা আইনজীবী ও তত্বাবধায়ক সরকারে সাবেক উপদেষ্টা ব্যরিস্টার মইনুল হোসেন এর পর দেশের প্রগতিশীল মানুষের মনে ক্ষোভের জন্ম হয়েছে ব্যারিষ্টার মইনুকে জেলে যেতে হয়েছে।  অথচ গত বছর দেশে করোনার ভয়াবহতার সময় সাংবাদিক স্বামী প্লাবন ও তার পরিবার কতৃক নির্মম শারীরি ও মানষীক নির্যাতনের শিকার হন দৈনিক সমকালের নারী সাংবাদিক সাজিদা ইসলাম পারুল।  পরুলের পক্ষে তার প্রতিষ্ঠান দাড়ালে পারুলকে নিজের বিচারের পাওয়ার জন্য নিজেকেই প্রতিবাদী হয়ে দাড়াতে হয়েছে অবশেষে থমকে ও যেতে হয়েছে।  মামলা হওয়ার পর ও যে কোন অদৃশ্য শক্তির বলে প্লাবনের টিকিটি পর্যন্ত ছুতে পারেন নি আমাদের প্রশাসন। এই তো সেদিন মধুপুরের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার এক নারীকে বর্বরভাবে ধর্ষণ করে তিন মদ্যপ। আমরা কয় জন ঐ ধর্ষনের শিকার নারীর খবর রেখেছে বা এর প্রতিবদ করেছি। আজ আমরা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে অন্যায়কে অন্যায় বলতে একেবারে ই ভুলে গেছি।  তাই আজ আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্রের মানুষ গুলি নানান ভাবে অন্যায়ের শিকার।  আমরা যদি প্রতিটি অন্যায়কে অন্যায় ভেবে প্রতিবাদ করতে পারতাম তা হলে আজ আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ও তার সঙ্গীদের  এত দিন  নিখোঁজ অবস্হায় থাকতে হতো না পরীমনিকে ও এমন লাঞ্চনা বঞ্চনার শিকার হতে হতো না। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশর একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটাই প্রত্যাশা আদনানা ফিরে আসুক তাদের পরিবারের কাছে পরীমনিরা যেন পায় তাদের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের ন্যায়বিচার।

অর্থপাচারকারী কারা?

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট আলোচনায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দুইজন সাংসদ দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয় বলে মন্তব্য করেন। জবাবে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বললেন, অর্থ পাচারকারী কারা, তারা যদি সেই তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, তাহলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কারা অর্থ পাচার করে, সেই তালিকা আমার কাছে নেই। নামগুলো যদি আপনারা জানেন, আমাদের দিন।’

দেশ-বিদেশে বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য পদ হারানো লক্ষ্মীপুর-২ আসনের কাজী মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুল যিনি বর্তমানে কুয়েতের জেলে আছেন। পাপুলকে আমি প্রভাবশালী সেই সাথে ভাগ্যবানও বলব, সে শুধু একা না বরং স্ত্রী সেলিনা ইসলামেরও ইচ্ছা পূরণ করেছেন। টাকার প্রভবে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত নারী সংসদের পদটি আদায় করে নিয়েছেন। এর আগে আমাদের দেশে স্বামী-স্ত্রী দু’জনই সংসদ সদস্য এমন ঘটনা সম্ভবত আর ঘটেনি। পদ-পদবীর জন্যই আমাদের দেশের রাজনীতি। একটি পদ পাওয়ার জন্য বা দল থেকে মনোনীত হয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদে নির্বাচিত হয়ে কাঙ্ক্ষিত আসনটিতে বসা প্রায় সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরই আকাঙ্ক্ষা কিন্তু কালো টাকার প্রভাব ত্যাগী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণে অনেকটাই অন্তরায়।
কয়েক শত কোটি টাকা খরচ করে নিজের ও স্ত্রীর নামে বিভিন্ন ব্যবসা খুলে রাজকীয় জীবন পাড় করছেন মিঠু-নাহিদ দম্পতি। দুই ছেলে রাজকীয়ভাবে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে আমেরিকায়। এর আগে আওয়ামী লীগের একজন প্রায়ত প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীর আমেরিকায় পড়তে যাওয়া পুত্রের নিউইয়র্ক শহরে এলাহী রিয়েল এস্টেট ব্যবসা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানান প্রতিবেদন হলেও এর কোনোই প্রতিকার হয়নি। বরং এখন নাকি আরও বৃহৎ আকারে সেই ব্যবসা চলছে।কয়েক দিন আগে বেসরকারি টেলিভিশনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখতে পেলাম, কানাডার বেগম পাড়ায় নতুন বাড়ি নির্মাণ করেছেন বাংলাদেশি নাগরিক শামীমা সুলতানা ওরফে জান্নাতী। পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, শামীমা সুলতানা একজন গৃহবধূ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, একজন গৃহবধূ ১৪ লাখ ৫৬ হাজার কানাডীয় ডলার ব্যয় করে কানাডার অভিজাত এলাকায় একটি বাড়ি কেনেন কীভাবে? শামীমা সুলতানা আর কেউ নন, নাটোরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম ওরফে শিমুলের স্ত্রী।

অর্থ কেলেঙ্কারিতে যুক্ত পিকে হালদার পরিচিত একটি নাম। দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠি পৌঁছানোর আগেই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পালিয়ে ভারত চলে গেছেন বলে আদালতে তথ্য দিয়েছিলেন এসবির ইমিগ্রেশন শাখা।

ফরিদপুরের রুবেল-বরকতের কথা কিন্তু আমরা ভুলতেই বসেছি। ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে বরকত ও তার ভাই ফরিদপুর প্রেসক্লাবের বহিষ্কৃত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলকে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

একই অভিযোগে গ্রেফতার হয় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নিশান মাহামুদ শামীম। তৎকালীন সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেবি ও জেলা শ্রমিক লীগের অর্থ সম্পাদক বেল্লাল হোসেন। এরপর কি আর কোনো উদাহরণ আছে?

২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ব্যবসা সাময়িকী ‘ফোর্বস’ সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে ৩৪ নম্বরে ছিলেন বাংলাদেশের জনৈক ব্যবসায়ী। তখন আমার এক সিংগাপুরী ব্যবসায়ী বন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ঐ ব্যবসায়ী আশ্চর্য প্রদীপের বলে এই তালিকা দখল করেছেন!

গত ১৮ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘রাজনীতিবিদরাই নন, বিদেশে বেশি অর্থ পাচার করেন সরকারি চাকরিজীবীরা। আমার ধারণা ছিল রাজনীতিবিদদের সংখ্যা বেশি হবে, কিন্তু আমার কাছে যে তথ্য এসেছে, যদিও এটি সামগ্রিক তথ্য নয়, সেটিতে আমি অবাক হয়েছি। সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অনেক সরকারি কর্মচারীর বাড়িঘর সেখানে বেশি আছে এবং তাদের ছেলেমেয়েরা সেখানে থাকে। আমার কাছে ২৮টি কেস এসেছে এবং এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন। এছাড়া কিছু আছেন আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী। আমরা আরও তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে পাচারে শুধু কানাডা নয়, মালয়েশিয়ারও একই অবস্থা। তবে তথ্য পাওয়া খুব কঠিন। বিভিন্ন মিডিয়ায় যে তথ্য বের হয়, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে, আসলে সংখ্যাটি তত নয়।’তার এই বক্তব্যের পর মহামান্য আদালত একটু নড়েচড়ে বসেন। উচ্চ আদালত থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে বিদেশে টাকা পাচারকারীদের তথ্য চাওয়া হয়। গত ১৭ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতে তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করলে মাননীয় বিচারক দুদকের আইনজীবীর কাছে ২২ নভেম্বরের পরে কী করেছেন তা জানতে চান। অবশ্য ২২ নভেম্বরের পর দুদক কী করছেন তা হয়তো আমাদের করোই আজ পর্যন্ত জানা হয়নি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ২৮ জুন জাতীয় সংসদে বলেছেন, তার সরকার বাংলাদেশি আমানতকারীদের তালিকা চেয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারকে অনুরোধপত্র পাঠাবেন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করবেন।

গত সাত বছরে কি এর কোনো অগ্রগতি আছে? সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) প্রকাশিত গত বছরের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশিদের সঞ্চয় বেড়েছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশিদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দ্বিতীয়। জমাকৃত এ টাকার পরিমাণ দেশের কমপক্ষে ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান। ২০১৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। সে হিসেবে আলোচ্য বছরে ১ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা বেড়েছে। শতকরা হিসাবে যা প্রায় ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ও পাচারকারীর সঠিক সংখ্যা কত তা বলা মুশকিল। তবে অর্থ পাচারকারী ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার প্রসঙ্গ এলেই সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের মুখে শুধুমাত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নামই শোনা যায়।

টাকা পাচার রোধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাজ করছে, তারপরও সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ বিশ্বের যে সব দেশে আমাদের টাকা পাচার হয়ে দুর্নীতিবাজরা সেকেন্ড হোম তৈরি করছেন সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ সেল গঠন করার কথা বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে বিদেশে অবস্থানরত আমাদের দূতাবাসগুলোই বা কতটা দুর্নীতি মুক্ত? তারা কি তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করতে পারছে?

মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, সিংগাপুরসহ অনেক দেশের বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হুন্ডি, আদম ব্যবসাসহ অনেক অভিযোগই শুনে আসছি। সেখানে দুদকের বিশেষ সেল কি কর্মক্ষম হবে? এর আগে আমরা কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের দেখেছি সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়াতে।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আমাদের দেশের শেয়ার বাজারের হাজার হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। সেই জাদুকর কারা তা কিন্তু আপনারা জানার চেষ্টা করেননি বা জেনেও না জানার ভান করে আছেন। ব্যাংক লুট ও দুর্নীতির হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে এই পাচারকারী কারা তাও নাকি আপনাদের জানা নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাজ কী? তারা কি তাহলে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন না?

মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনি না জানলেও এই দেশের আমজনতা কিন্তু অবগত আছেন এই অর্থপাচারকারী কারা। যদিও কখনোই রাষ্ট্রীয়ভাবে হাতে গোনা দুয়েকজন ছাড়া কারো কিছুই হয়নি বা হবে না তবে সামাজিকভাবে আমাদের সাধারণ মানুষেরই দায়িত্ব এই অপরাধীদের কালো চেহারা উন্মোচন করা।