অন্ধকারঘড়ে সাপ যেন সমস্ত ঘড়েই যেন সাঁপ !

এ বছর অর্থাৎ ২০১৫ সাল শুরুই হয়ে ছিলে ইদুঁর বিড়াল খেলার গল্প দিয়ে । বছরের দ্বিতীয় মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ২৬ তারিখে প্রায় দিবালোকে ই বাংলা একাডেমির বইমেলার মূল ফঁটের কাছেই ঘাতকের চাপাতির কোপে খুন হতে হয় মুক্তমনা ব্লগার ও লেখক অভিজিৎ রায় কে সাথে গুরুতর আহত হন তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা । অভিজিৎরায় হত্যার দায় স্বীকার করে নেয় উগ্র ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। এর পর থেকেই  একে একে খুন হন বাবু, বিজয় ,নীল ,দীপন সহ দুই বিদেশীনাগরিক যার প্রতিটির ই দায় স্বীকার করে নিয়েছে নানা নামের উগ্র ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন । পরিশেষে এই দায় স্বীকার নিয়ে ও বিতর্কের জন্ম হয় যখন দুই বিদেশি নাগরিকহত্যার পর এর দায় স্বীকার করে নেয় বর্তমান জামনার বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট আইএস । সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীবলে আসছে যে বাংদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট এর কোন অস্তিত্ব ই নাই হয়তো তাদের কিছু অনুসারী আছে তাদের এমন কথায় আমাদের মনে স্বস্তি আসেনি। কথার ভাবার্থ এমন  যে ময়লা নাই তবে দুর্গন্ধ ঠিক ই আছে যা পরিবেশকে নষ্ট করছে । যাই ই হউক শান্তি প্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের ও চাওয়া যে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিসকল অপশক্তির নজর থেকে মুক্ত থাকুক । কিন্ত সাম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনা আমাদেরকে মানসিক ভাবে বেশ দুচিন্তায় রেখেছে । একের পর এক নানা ধর্ম ও মতার্দশে বিশ্বাসীদেরধর্মীয় আনুষ্ঠানে নারকীয় হামলার ঘটনা । সবশেষ যে ঘটনা বিশেষ করে চিন্তিত করেছে তা হলে রাজশাহীর সেই বাগমাড়ায় আহমাদিয়া মুসলিম জামাতের একটি মসজিদেআত্মঘাতী বোমা হামলা । এ ঘটনা আবার ও নতুন করে স্বরন করিয়ে দেয়  ” বাংলা ভাই ” ও ” শায়েখ আব্দুর রহমান ” দের কথা , স্বরন করিয়ে দেয় চাঁদপুর কিংবাগাজীপুরে আদালতে আত্মঘাতী বোমা হামলার কথা । গত কয়েকদিনে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গি দমনে একটি বিশেষ ভূমিকায় অবর্তীন হয়েছেন । হঠাৎকরেই ঢাকা চট্রগ্রাম গাজীপুরে জঙ্গি আস্তানায় হানা অস্ত্র ও বিষ্ফোরক উদ্ধার গুলিতে জঙ্গি নিহত ইত্যাদি ঘটনা আমাদেরকে আনন্দিত করলেও কেন যানি মনের ভিতর একটাখটকা এটে যায় ? সারা দেশে এত গুলি জঙ্গি আস্তানা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে গড়ে উঠল , আমাদের অতি প্রশিক্ষিত গোয়ান্দাসংস্হার লোকার ই বা কি করেছেন এত দিন ? হঠাৎ করে কিভাবে এত গুলি জঙ্গি আস্তানা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্রের আবিস্কারে মনে হচ্ছে সাড়া দেশে আরো কত না জানি  জঙ্গিআস্তানা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র আছে ? অন্ধকার ঘড়ে সাপ মনে হয় যেন সমস্ত ঘড়েই যেন সাঁপ !  তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে যে সরকার কি এতদিন শুধু আমাদের আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়ান্দা সংস্হাকে শুধু মাত্র তাদের রাজনৈতিক প্রতি পক্ষকে প্রতিহত করার কাজে ব্যস্তছিল , যে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন গুলিনিশ্চিন্তে সংগঠিত হয়েছে করেছে শক্তি  সঞ্চয় ?

এ কেমন দাবী খালেদা জিয়ার !

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ও আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ একই সূতয়ে গাঁথা । এর কোন টাকেই বাদ দিয়ে আমাদের অস্তিত্বের কথা চিন্তা একেবারেই অসম্ভব । অবিসাংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নামেই সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্হায়ী রাষ্ট্র প্রধান করে গঠিত হয়েছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার যাদের নেত্বতে পারিচালিত হয়েছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ । জিয়াউর রহমান , খালেদ মোশারফ , মোঃ শফিউল্লাহদের রণাঙ্গণে নেতৃত্ব সেই সাথে বাংলার আপমর জনসাধারনের আত্মত্যাগ ই মহান মুক্তি যুদ্ধে আমাদের বিজয়ের মূল মন্ত্র । বিজয় অর্থাৎ স্বাধীনতার চৌয়াল্লিশ বছর পর ও নানা ভবে বির্তকিত করা হয় আমাদের মুক্তি যুদ্ধকে । ” মুক্তিযুদ্ধ মানেই আওয়ামী লীগ ” এমনটাই দাবী আওয়ামী নেতৃত্বের কিন্তু এ দাবী কখনোই বাস্তবতা পায়নি । মুক্তিযুদ্ধ মানে ই যে বাংলার আপমর জনগন এটাই বাস্তবে প্রমানিত হয় । কারণ ” মুক্তিযুদ্ধ মানেই আওয়ামী লীগ ” এ তত্ত্বে যে সব মুক্তিযুদ্ধারা বিশ্বাসী নয় পরবর্তীতে তারাই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের গড়া বিএনপি তে যোগদিতে থাকেন , গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র । অতি সম্প্রতি ” মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন আছে ” বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্য জাতিকে মর্মাহত করছে এটাই স্বাভাবিক । জামাত- শিবির সহ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ এমনটি বলে আসছিল যদিও এর পক্ষে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমান কোন ভাবেই উপস্হান আজো করা সম্ভব হয়নি বা কখনো হবে ও না । শহীদের সংখ্যা যাই হউক না কেন আমাদের দেশ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয়েছে ,মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বোরোচিত গনহত্যা হয়েছে এটা তো বাস্তব সত্য । নাকি এমন দিন আসছে যে বিএনপি নেত্রীর মুখে তার মিত্র জামাত শিবিরের মত শুনতে হবে আমাদের দেশে কোন মুক্তি যুদ্ধ হয়নি হয়েছে গৃহযুদ্ধ নয় তো দীলিপ বড়ুয়াদের মত দুই কুকুরের কামড়া কামড়ি !
খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ রাজাকার পুষছে। যুদ্ধাপরাধী নূরুল ইসলামকে ‘পতাকা’ দিয়েছিল। খালেদা জিয়ার এ কথা অস্বীকার করার কোন পথ নেই ঠিক তেমনি শাহ আজিজ সাকা চৌধুরী নিজামী মুজাহিদের পতাকা ও সহ্যকরা যায় না । শেখ হাসিনা নিজের দলের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন না এটা সত্য এটা ও সত্য যে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম খালেদা জিয়ার কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়ে বিচার পান নি পেয়েছেন লাঞ্ছনা আর রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপবাদ , গোলাম আজম পেয়েছে এদেশের নাগরিকত্ব । বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন তারা ক্ষমতায় আসলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখবেন জাতি আপনার এ কথাকে সাধুবাদ জানায় কিন্ত প্রশ্ন একনব্বইয়ে ক্ষমতায় এসে কেন এ কথাটি বেমালুম ভুলেগিয়েছিলেন ? যে ভাবেই হউক কেন শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন পরে বিচারের কাজ কাধে নিতে হলো ? জামায়াতের আদর্শ-নীতি ধারণ করে নিজেদের কে যেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা যায় না তেমনি ‘স্বচ্ছ’ ‘আন্তর্জাতিক মানদন্ড’ ইত্যাদি ইত্যাদি বলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াধী রাখার কথা বলা শুধুই মাত্র লোক হাঁসানোর শামিল । খালেদা জিয়া যেখানে শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সে ক্ষেত্রে তার দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের সে প্রশ্নকে সমর্থন করাই একমাত্র কর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে সেই সাথে জামাত-শিবিরের প্রপাগান্ডাকে উৎসাহিত ও সমর্থিত করেছে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে নিজেদের দাবিকে ও জনগনের কাছে হাস্যকার দাবী হিসেবে পরিনত হয়েছে ।

সমগ্র জাতিকে এর খেসারত দিতে হবে !

ছাত্র যাদেরকে বলাহয় জতির ভবিষ্যৎ । কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীরা ও তাদের ছত্রছায়ায় থাকা ছাত্ররা যেন মূর্তমান আতংক । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে তথা কথিত এসব ছাত্র সংগঠনের নেতা সহ তাদের ছত্রছায়ায় থাকা ছাত্রদের হাতে লান্হিত নির্যাতিত হতে হয় সাধারন মানুষদের সাধারন পথচারী ফুটপাতের হকার এমন কি শপিংমলের ব্যবসায়ীরা ও তাতের লান্হনা ও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষাপায় না । আমি যখন এ লেখাটি লেখছি তখন আমি খুবই অসুস্হ আমার কাপলে সাতটা সেলাইয়ের প্রয়োজন হয়েছে । তার পর ও লিখছি কার আমার এই বাস্তব অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করতে চাই । পেটের দায়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সৎভাবে বাঁচার জন্য ব্যবসাকরি । আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিউমার্কেটস্হ ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে । আমার অত্র এলাকার ব্যবসায়ীরা সব সময় ই ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা কর্মী ও তাদের চেলা চেংটারদের অত্যচারে অতিষ্ট বিভিন্ন বিনেপয়সায় তুলি নিয়ে যায় দোকানিদের নানা পন্য সহ নগদ টাকা আবার কখনো দবীকরে মোটা অংকের চাঁদা আর সে দাবি পূরন করতে ব্যর্থ হলেই ব্যবসায়ীদের উপর নেমে আসে অত্যচারে খড়গ , এ অত্যাচারে মাত্রা গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পড়ে কয়েক গুন বেড়ে গেছে প্রতিনিয়তই ব্যবসায়ীরা কোন না কোন হামলার শিকার হচ্ছে । ১৭ ডিসেম্বর এমন ই একটি ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় ধনমন্ডি হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীদের এখানকার এক দোকানীর কাছ থেকে ঢাকা কেলেজে ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজন হাজারচল্লিশে টাকা মূলের কয়েকটি শাড়ী নাম মাত্র মূল্য দিয়ে নিয়ে যেতে চায় তথাকথিত ঐ ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারি লোকেরা কিন্তু দোকানী কোন ভাবেই দিতে অস্বীকার করায় ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারিরা বাহিরে চলে আসে এর ই কিচ্ছুক্ষন পর ঢাকা কলেজ থেকে শদুয়েক তথাকথিত ছাত্র এসে অর্তকিত হামল চালায় ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের সমগ্র ব্যবসায়ীদের উপর লুট করে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকার মালা মাল সহ নগদ অর্থ যা এটিএন নিউজের ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সংবাদে মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজে প্রকাশ করা হয় । শুধু ঢাকাতেই নয় ১৭ ডিসেম্বর একই ধরনের হালার শিকার হন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা । আগেই বলেছি ছাত্ররা জাতীর ভবিষ্যৎ আজকের ছাত্র আগামীর রাষ্ট্রের কর্ণধার , প্রতিনিয়তই সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে আমাদের দেশের তথাকথিত ছাত্রসংগঠনের বিভিন্ন অপকর্মের সংবাদ । ছাত্ররা যখন লেখাপড়ার মননিবেষ না করে চাঁদাবাজি ছিনতাই খুন রাহাজনীতে লিপ্ত হয় তখন সেই রাষ্ট্রের ভিবষ্যৎ কি সেটাই একটা বড় প্রশ্ন ? তাই আমাদের রাজনৈতিক দল গুলির বিশেষ করে বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের উচিত এখন ই সময় তাদের ছাত্রসংগঠন গুলির লাগাম টেনে । ধরা তা না হলে অদূর ভবিষ্যৎ সমগ্র জাতিকে এর খেসারত দিতে হবে ।

লাল-সবুজের পতাকা ছাড়া আর কি পেলাম ?

ডিসেম্বর বাংগালী জাতীর অর্জনের মাস গৌরবের মাস এটা আমাদের স্বাধীনতার মাস এটা আমাদের বিজয়ের মাস । কিন্তু স্বাধীনতার চৌয়াল্লিশ বছর পার হলেও আজ ও স্বাধীনতার খোঁজে আমরা ! আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা আমাদের বিজয় । জাতি হিসেবে আমাদের জন্মলগ্ন থেকেই বার বার নানা ভাবে হোচট খেয়ে আজ ও আতুর ঘরে ই আহত হয়ে পরে আছে আমাদের স্বাধীনতা । যার জন্য সম্পুর্ণ দায়ি আমাদের নষ্ট রাজনীতি । রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নের কারণে ব্যর্থ হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা , বিজয় ও স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ই আমাদের গনতন্ত্র । আমাদের রাজনীতি জীবিদের ক্ষমতা লোভের জন্যই আজ আমাদের স্বাধীনতা দখল করে নিয়েছে নানা ধরনের সন্ত্রাসবাদ ,যার ভয়ে বোবা হয়েছে আমাদের ষোল কোটি মুখ অন্ধ হয়েছে বত্রিশ কোটি চোখ ! স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি শাসক গোষ্ঠিই জাতিকে ঠেলে দিয়েছে ব্যর্থতার আস্তাকুড়ে । দেশ ও জাতি গড়তে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিটি শাসকদল আদলাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সচিবালয় থেকে হাসপাতাল সব জায়গাই কুলষিত হয়েছে তাদের নোংরা রাজনীতির থাবায় । নানা ভাগে নানা মতে বিভক্ত হয়েছে আমাদের রাজনীতি সেই ধারায় আজ ও বিভক্ত সমগ্র জাতি । রাজনীতিতে আজ মেধার চেয়ে অর্থ পেশীশক্তি আর সন্ত্রাসকে দেয়া হচ্ছে প্রাধান্য । জোটের নামে কাছে নিয়েছে রাজাকার আর স্বৈরচারীকে ভোটের নামে চলছে কেন্দ্র দখল । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাকে বলা হয় মানুষ গড়ার কারখান আজ আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির দিকে চোখ বুলালে আক্ষেপ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা । সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলির আজ দৈনদশা , সরকার টাকা ঢালছে কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি থেকে প্রাপ্য মেধা বের করে আনতে পারছে না। শিক্ষাংগনে চলছে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজি সবগ্র দেশ আজ বাজিগরের কবলে । অপরাজনীতি ই গ্রাস করে নিয়েছে মেধাকে । অশিক্ষা আর কুশিক্ষাই গণতন্ত্রের বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মৌলবাদ তথা ধর্মীয় উগ্রবাদ পাকা পোক্ত ভাবে মাথা গজিয়ে উঠেছে আমাদের দেশে যা আজ আমাদের স্বাধীনতা আমাদের চেতনা আমাদের সংস্কৃতি তথা আমাদের জাতিসত্তার মূলচেতানার জন্য হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে । মানুষ আশায় বুক বাধে পাওয়ার আশায়। যাই করুক না কেন, সব কিছুতেই কিছু না কিছু পেতে চায়। প্রত্যাশার চেয়ে যদি কম কিছু পায় বা কিছু করে যদি কিছু না পায়, তখন মানুষ আশাহত হ্য় জন্ম নেয় না পাওয়ার বেদনা মনের ভিতর জন্ম নেয় হায়-হুতাশ। আর মনের কাছে বার বার শুধু ই জিজ্ঞেস করে, কি পেলাম ? আমাদের মহান মুক্তযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী প্রত্যেক বীর সেনানিরই কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশ ছিল । তাদের প্রত্যাশ ছিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক সোনার বাংলা , সেই প্রত্যাশা আজো শুধুই প্রত্যাশায় ই রয়ে গেছে । স্বাধীনতা ও বিজয়ের চৌয়াল্লিশ বছর পাড় করে আজ ও আমাদের একই জিজ্ঞেসা স্বাধীন বাংলাদেশে একটি লাল-সবুজের পতাকা ছাড়া আর কি পেলাম ?

কম্বলের ভাজে সাংবাদিকের সম্মান !

 

” সাংবাদিকের কলম কামানের চেয়েও শক্তিশালী ” সম্রাট নেপোলিয়নের এই উক্তি ই একজন সংবাদিকের মর্যাদা নির্ণনেয়র জন্য যথেষ্ট । তার পর ও আমার দেখা থেকে আমি বলছি চারণ সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহমেদের কথা যাকে বলা হয় মফস্বল সাংবাদিকতার পথিকৃৎ । স্কুল জীবনে তার সানিদ্ধ পেয়েছিলাম যদিও সম্পর্কে তিনি আমার আত্মীয় হন । ভাষাসৈনিক , রাজনীতিবিদ ও কর্মজীবনে ছিলেন সাংবাদিক এত কিছুর পর ও তার অত্যন্ত সাধারন জীবন যাপন সকলকেই আকৃষ্ট করতো । কাধে বেগ আর হাতে পানির লোটা নিয়ে পায়ে হেটে সমগ্র মুন্সীগঞ্জ চষে বাড়াতেন তিনি খোঁজ খবর রাখতেন সুবিধা বঞ্চিত সাধারন মানুষ গুলির । দৈনিক বাংলার পাতায় ছাপা হতো ঐ সকল মানুষ গুলির সুখ দুঃখের কথা । বাম রাজনীতি ছেড়ে প্রতিক্রিয়াশীল মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যোগদেয়ার কারনে আপন বড় ভাই তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা শামসুদ্দিন আহমদ বিরুদ্ধে তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুন্সীগঞ্জে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে কথা গুলি বলার কারন অতি সম্প্রতি গাজী টেলিভিশনের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি মোহাম্মদ সেলিম ও তার স্ত্রী মুন্নি আক্তারের ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার আমাকে ভীষন ভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত করেছে । এক জন সংবাদিক যাকে নাকি সমাজের বিবেক হিসেবে জানা হয় যাকে নাকি সমাজের প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধা ভরা চোখে দেখেন তার দ্বারা এমন নিকৃষ্ট কাজ ! শুধু সেলিম ই নয় আমাদের সমাজে আরো অনেক সেলিম ই আছে যারা সংবাদিকতার এই মহন পেশাকে নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য অত্যন্ত নোংড়া ভাবে কাজে লাগাচ্ছে । আমাদের দেশে সংবাদপত্র সহ সংবাদ মাধ্যমের সংখ্যা কত তা একজন সাধারন মানুষ হিসেবে আমার বলা খুবই মুসকিল তবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ি দেশে অনুমোদন রয়েছে ৪৪টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম, ৩২টি কমিউনিটি রেডিও, এক হাজার ১৮৭টি দৈনিক পত্রিকা, শতের ওপর অনলাইন পত্রিকার । এসব পত্র পত্রিকা কটার নাম ই বা আমাদের জানা আছে এর কটা ই বা আমাদের চোখের সমানে আসে ? তা হলে প্রশ্ন বহুল প্রচারিত সংবাদ পত্র গুলি ছাড়া বাকী সংবাদ পত্র গুলি চলে কি করে ? অখ্যাত সকল পত্রিকার বেশীর ভাগ সম্পাদক ই বিজ্ঞাপন পাবার আশায় ডিএফপির অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিজ্ঞাপন আদায় করে নিচ্ছেন সেই সাথে সামগ্র দেশ থেকে সংবাদিক নিয়োগের নাম করে চালায় সাংবাদিক পরিচয়পত্রের বানিজ্য আর তাতেই জন্ম হচ্ছে নানা ভুইপোড় সংবাদিকের । আর এসকল ভূইপোড় সাংবাদিকরাই সমগ্র দেশে একটা বিশেষ বিড়ম্বনার নাম হয়ে দাড়িয়েছে । বিশেষ করে প্রতিনিয়ত ই বিভিন্ন প্রাইভেট গাড়ি ও মোটর সাইকেলে লেখা দেখা যায় সাংবাদিক। তিন চাকার সিএনজি চালিত আটোরিক্সা ও এর ব্যতিক্রম নয় । যা আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে বিব্রত অবস্হার মধ্যে রাখে। এ ধরনের মোটরযান দিয়েই অনক সময় সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধ । সেই সাথে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরছে ভূইপোড় সাংবাদিকরা । এ ধরনের সাংবাদিকদের জন্যই অনেক ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হচ্ছে সাংবাদিকতার পেশা । সাংবাদিকের কলম চলবে সত্যের পথে, কলম চলবে নির্ভীকতায়,সাংবাদিক চলবে আলোক মশাল হয়ে। সম্পাদক হবে সুর্য্যের মত। যার আলোতে আলোকিত হবে সমাজ ,সাংবাদিক,বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি সহ পত্রিকার প্রত্যেকটা বিভাগ। ন্যায়ের পথে মৃত্যু এতো মৃত্যু নয় অন্যদের বেঁচে থাকার প্রেরণা । সাংবাদিক বেঁচে থাকে তাঁদের লিখনীর মাধ্যমে। সৎ সাহসী সাংবাদিক আসে যুগে যুগে ।তাঁরা অমর।তাঁরা চির স্মরণীয়। তাই এ মহান পেশার পবিত্রতা বজায় থাকবে এটাই কামনা

খোলা ম্যানহোল বন্ধ ফেইসবুক !

আমরা বাংলাদেশীরা নিজেদের নিয়ে ভাবি আমরা বোধ হয় কোন বন্ধ রাজ্যের বাসিন্দা । বস্তবতার সাথে আমাদের ভাবনার অনেকটাই মিল আছে । সেই অনেক আগে থেকেই ভাগ্যের চাকা মুক্ত ভাবে ঘুরা বন্ধ হয়ে গেছে । কখনো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি কখনো আবার পাক বর্বর গোষ্ঠি আর স্বাধীনতার পর আমাদের শাসক গোষ্ঠি কেউই আমাদের বন্ধ খাঁচা থেকে বের হতে দেয় নি । আমাদের স্বাধীন চিন্তা বা স্বাধীন মত প্রকাশ বন্ধ করা হয়েছে নানা ভাবে নানা করণে । সব শেষ নানা অজুহাতে বন্ধ করা হয়েছে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক । বন্ধ রাজ্যে ” খোলা ম্যানহোল ” আবারো আমাদের সংবাদের শিরোনাম । গত ০৮ডিসেম্বর ২০১৫ রাজধানীর শ্যামপুরে খোলা ম্যানহোল দিয়ে স্যুয়ারেজ লাইনে পড়ে মারা যায় পাঁচ বছরের শিশু নীরব । আমাদের টিভি চ্যানেল গুলির বদৌলতে সমগ্র জাতি শিশু নীরব ম্যানহোল দিয়ে স্যুয়ারেজ লাইনে পড়ে যাওয়ার পরের মুহুর্ত থেকে সম্পুর্ণ উদ্ধার কাজ সরাসরি অবলোকন করেছেন । যা দেখে প্রতিটি বিবেকবান মানুষের অন্তরে দাগ কেটেছে । আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে সমগ্র দেশে । এর আগেও ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনি এলাকায় পরিত্যাক্ত নলকূপের খোলা গভীর পাইপে পরে মারা যায় একই বয়সের আরে এক শিশু জিহাদ । নীরব ও জিহাদের মৃত্যুকে অন্য কেউ কোন ভাবে দেখে তা আমি জানিন তবে আমি ভাবি এগুলি হত্যা । যাদের অবহেলায় নীরব ও জিহাদের আকালে জীবন দিতে হয় তারা ই তো তাদের খুনি । জিহাদের বাবা পুত্র হত্যার বিচারের জন্য আদালত আর পুলিশ নিয়ে আছে দৌড়রে উপরে অথচ খুনিরা বুক ফুলিয়ে হাটছে চোখ বন্ধ করা প্রশাসনের নকের ডগা দিয়ে । আজ যেখানে মৌলবাদের চাপাতি আর রাষ্ট্র যন্ত্রের ৫৭ ধারায় প্রায় বন্ধ হয়ে আছে আমারে মুক্ত চিন্তা ও মুক্ত মত, যেখানে পুলিশের গুলির কাছে বন্ধ হয়ে আছে আমাদের গনতান্ত্রিক অধিকার , রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কাছে বন্ধ হয়ে আছে আমাদের ভোটাধিকার , দূর্নীতির কাছে বন্ধ হয়ে হয়ে আছে উন্নায়নের পথ চলা । গুম হওয়া সন্তানের মায়ের অর্তনাথ কখনোই পৌছেনা কান বন্ধ থাকা প্রশাসনের কানে । এত কিছু বন্ধ থাকার পর ও শুধুই খোলা থাকছে পাড়া মহল্লা বা সড়কের পাশের ম্যানহোল কিংবা পরিত্যাক্ত নলকূপের পাইপের মুখ । নীরব ও জিহাদের সত্যি ই নিরবে চলে যায় কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ কে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে যায় আর বলে যায় যা বন্ধ করার তা তোমরা অসভ্যের মত খুলে রেখেছ আর যা খুলেরাখার তা তোমরা শক্তি আইন ও প্রশাসন দিয়ে বন্ধ করে রেখেছ । তাই শুধু একটাই প্রশ্ন এই বন্ধ ও খোলায় দায় কে নিবে ?

এ কোন শকুন আমাদের আকাশে !

কান্তজিউর মন্দিরের রাসমেলা ও রক্ষা পেলনা শকুনের কালো থাবা থেকে । দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক একের পর এক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষিতে এ ঘটনা কোন ভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মেনে নেয়া সম্ভব নয় । এ ঘটনা আমাদের নাগরিক জীবন কে আরো নিরাপত্তাহীনতার মুখে দিয়েছে । বিদেশী নাগরিক , ব্লগার , প্রকাশক , মহরমের তাজিয়া মিছিল , ধর্মীয় পীড় , মাওলানা, যাজক , মোয়াজ্জিন কিংবা মাজারের খাদেম হ্ত্যা সবই একই সূত্রে গাঁথা । আমাদের গোয়েন্দাদের তথ্য মতে এসব ঘটনার সব গুলির সাথেই আছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সম্পৃক্ততা । জেএমবি , আনসারউল্লাহ বাংলাটিম বা আনসার আল ইসলাম যা ই বলি না কেন এসব ই যে উগ্র ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠির কাজ তা অস্বীকার করার উপায় কারো ই নেই । একের পর এক এধরনের হামলা জাতি হিসেবের আমাদের জন্য কত টুকু শন্তির বার্তা বয়ে আনছে তা আমরা সবাই কম বেশি অনুভব করছি ? পূর্বের ঘটে যাওয়া এধরনের জঙ্গি হামলার কোনটার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার না হওয়ার ফলাফল ই বর্তমান সময়ের এই নাজুক পরস্হিতি ।

যশোহরের উদিচী থেকে শুরু করে রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখে বোমা হামলা সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা থেকে শুরু করে ২১ আগষ্ট আওয়ামীলিগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এমন কি বালিয়ার চড়ে গির্জায় বোমা হামলা থেকে শুরু করে খুলনার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে বোমা হমলা কোনটার ইতো তদন্ত ও বিচার সম্পুর্ন হয়নি । এ সব হমলাকে কাজে লাগিয়ে এর ফায়দা হাসিল করে নিয়েছে আমাদের বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠি । এসব হালার মামলায় প্রতিরোধ করতে পেরেছে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ।সাজানো হয়েছে নতুন নতুন নাটক আর এসব নাটকের নায়কদের সন্ধানে যখন আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে থাকতে হয় ব্যস্ত সেই সুযোগ কেই কাজে লাগিয়ে সত্যিকার ভিলেনেরা পাড় পেয়ে আবার নতুন ঘটনার জন্ম দিয়ে তাদের অসীম শক্তির বার্তা আমাদে জানান দেয় । দিনাজপুরের কান্তজিউয়ের মন্দিরে বোমা হামলা তাই প্রতিচ্ছবি । দিনাজপুরের কাহারোলে কান্তজিউয়ের মন্দিরে প্রায় তিন শতাব্দী ধরে চলে আসছে রাসমেলা । কান্তজিউর মন্দির ও রাসমেলা এটি হিন্দুধর্মাম্বলীদের হলে ও শরিক হন সকল ধর্ম বর্ণ ও গোত্রের মানুষ যার প্রমান আমরা দেখেছি আহতদের তালিকা থেকে। বোমা হামলার স্হান ছিল রাসর যাত্রা প্যান্ডেল । যাত্রাপালায় জঙ্গি হামলার এটা নতুন কিছুন নয় এর আগে ও বিভিন্ন সময়ে যাত্রা প্যান্ডেলে জঙ্গি হামলার ঘটনা আমারা দেখেছি । সে অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় এ ধরনের হামলা আমাদের আবহমান বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি হামলা আমাদের জাতি সত্ত্বার উপর হামলা । তাই শকুনের এই কলো থাবা এক দিকে যেমন হুমকিতে ফেলেছে আমাদের বাঙালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি , অন্যদিকে হুমকি শিকার হয়েছে আমাদের জাতি সত্ত্বার মূল ভিত্তি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি ।এখন ই সময় আমাদের সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তি তাদের চোখের ঝাপসা কাটিয়ে খোলা চোখে তাকাতে হবে আমাদের মুক্ত আকাশের দিকে যেখানে উড়ছে ধর্মীয় উগ্রবাদের কালো শকুন বার বার থাবা দিচ্ছে আমাদের জন-জীবনের নিরাপত্তা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ও জাতি সত্ত্বার মূল ভিত্তি বাঙালি সংস্কৃতির উপর।

স্বৈরাচার পতনের রজত জয়ন্তি!

২৪ মার্চ ১৯৮২ বাংলাদেশের আকাশে উদিত হয়েছিল আরো এক কলো সূর্য এ দিন দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সরিয়ে বরখাস্ত সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সামরিক আইন জারির মাধ্যমে দখল করে নেয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে ছাত্র সংগঠন গুলি এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল কে নিরবে মেনে নিতে পারে নি । এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে প্রথম আন্দোলনের সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে । সামরিক শাসন জারির প্রথম দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করে। ২৪ মার্চ কলাভবনে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় ছাত্রনেতা শিবলী কাইয়ুম, হাবিব ও আব্দুল আলী। পরে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতে তাঁদের সাত বছরের কারাদন্ড হয়। সেই থেকে শুরু হয় সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আপসহীন লড়াই।

বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবসে সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে গিয়ে শহীদ বেদিতেই সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। মিছিলের খবর শুনে সাভার সেনানিবাস থেকে সেনাবাহিনী চলে আসে, স্মৃতিসৌধে ছাত্রদের ওপর চলে নির্মম নির্যাতন। সে সময় সামরিক আইন জারি থাকার কারনে সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ থাকলে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে লাল-কালো অক্ষরে এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দেয়াল লিখন অব্যাহত ছিল। এক সময় স্বৈরসরকারের পুলিশ সাদা চুন দিয়ে দেয়াল লিখন মুছতে মুছতে ক্লান্ত হয়ে পরে । এভাবেই এরশাদের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলতে থাকে দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের প্রাথমিক প্রস্তুতি।

সেপ্টম্বরের প্রথম সপ্তাহে গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম লিখিত বিবৃতি প্রদানের মধ্যমে প্রতিবাদের সূচনা হয় । এর ই মধ্যে এরশাদের সামরিক সরকারে বির্তকিত শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানে নতুন শিক্ষানীতি নিয়ে ছাত্রসমাজ ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে ।১৯৮২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা দিবসে এ শিক্ষানীতি বাতিল করার পক্ষে ছাত্র সংগঠনগুলো একমত হয়। ১৯৮২ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ১৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ । ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে গণসাক্ষরতা অভিযান চলে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কাজও শুরু হয়। এ সংগ্রামকে প্রতিরোধ করতে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি খন্দকার মোহাম্মদ ফারুককে গ্রেপ্তার করলে ছাত্ররা আরো ফুঁসে ওঠেন। তাঁর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি সারা দেশে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। এরই মধ্যে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৩ সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি হাতে নেয়।

কর্মসূচি অনুযায়ী ১৪ ফেব্রুয়ারি সুশৃঙ্খল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কর্মসূচিতে যোগ দেন। মিছিলের প্রথমে শতাধিক ছাত্রীর অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। খুবই শান্তিপূর্ণ মিছিল ছিল, উৎসবের মতো অনেকটা। ব্যারিকেডের সামনে যখন মিছিল যায় হাইকোর্টের গেট ও কার্জন হল-সংলগ্ন এলাকায়, তখন মেয়েরা ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়েন। নেতারা তারকাঁটার ওপর উঠে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন। মিছিলটি ছিল হাইকোর্টের গেট থেকে বাংলা একাডেমী পর্যন্ত। কিন্তু কোনো উসকানি ছাড়াই তারকাঁটার একদিক কিছুটা সরিয়ে রায়ট কার ঢুকিয়ে রঙিন গরম পানি ছিটাতে শুরু করে পুলিশ। এরপর ভেতরে ঢুকে বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। সাধারণ ছাত্ররা তখন এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। পুলিশ তখন ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। সেদিন জয়নালকে গুলিবিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁর শরীর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে পুলিশ। একই সময় শিশু একাডেমির এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দীপালি সাহা নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয় নিহত হয় তবে দীপালির লাশ গুম করে ফেলে পুলিশ। আরো অনেকেই নিখোঁজ হয় তাদের জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থায়ই পাওয়া যায়নি। জয়নাল পড়েছিলেন কার্জন হলের মধ্যে। তাঁকে ধরে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে যেসব ছাত্র সকালে মিছিলে আসেননি, তাঁরা বিকেলে জয়নালের জানাজায় বটতলায় উপস্থিত হন। হাজার হাজার সাধারণ মানুষও উপস্থিত হয়। উপস্থিত ছাত্র-জনতার ওপর চলে পুলিশি তাণ্ডব। এ সময় মহসীন হলের রান্নাঘরে জয়নালের লাশ ছাত্ররা লুকিয়ে রাখে।

পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় সেনাবাহিনী ও বিডিআর। শাহবাগ, টিএসসি চত্বর, কলাভবনের সামনে, নীলক্ষেত, কাঁটাবনের রাস্তা ধরে পুরো অঞ্চল ঘেরাও করে ফেলে তারা। অপরাজেয় বাংলার সমাবেশে পুলিশ অতর্কিত লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় বহু ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উপাচার্যের কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের মেরে হাত-পা ভেঙে ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ফজলুল হালিম চৌধুরী পদত্যাগ করেন। কলাভবনের ভেতরে ঢুকে পুলিশ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক যাঁকে পেয়েছে তাঁকেই নির্যাতন করেছে। ওখান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খ ম জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে। অবশেষে মুহসীন হলের রান্না ঘরে লাশ পাওয়া গেলে অন্যান্য হলে লাশের তল্লাশি বন্ধ করা হয়। এ সময় দুই হাজারের ওপর ছাত্রজনতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে সরকারি হিসেবে তা এক হাজার ৩৩১ জন। সবাইকে গ্রেপ্তার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে।এরপর তাঁদের তুলে দেওয়া হয় আর্মির হাতে। বন্দি ছাত্র-জনতার ওপর প্রথমে পুলিশ ও পরে আর্মি নিষ্ঠুর নির্যাতন চালায় । মেয়েদেরও গ্রেপ্তার করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রবল চাপের কারণে তাঁদের ১৫-১৬ তারিখের মধ্যে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আর স্বৈরাচারবিরোধী এটিই প্রথম ব্যাপকতর আন্দোলন। স্বৈরাচারবিরোধী এই আন্দোলন কে সমর্থন জানাতে চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ও সেদিন রাজ পথে মিছিল সহ নেমে আসে তাদের মিছিলে শরিক হন মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজের ছাত্ররা ।এ মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ ও ব্যাপকভাবে লাঠিচার্জ করে এতে শহীদ হন কাঞ্চন ।আর এভাবেই বাংলার মাটিতে স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলন চাংগা হতে থাকে ।

১৯৬৯ সালের আইয়ূব বিরোধী আন্দোলনে আসাদ নিহত হলে যেমন কেঁপে উঠেছিলো তৎকালিন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান তেমনি নূর হোসেন নিহত হবার পর এরশাদের স্বৈরাশাসনের ভিতে ও চরম ভাবে ঝাকুনি লাগে । আটোরিক্সা চালক নুর হোসেন দেশের অন্য সবার মত গনতন্ত্র মুক্তির আকাংখায় ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনে বুকে-পিঠে ” গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক ” লেখা স্লোগান নিয়ে বিক্ষোভ করেন নূর হোসেন। রাজধানীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন স্কয়ার ) পুলিশের গুলিতে শহীদ হন তিনি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অকুতোভয় সেই যুবকের অগ্নিঝরা স্লোগান সহ্য হয়নি তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদের। স্বৈরাচারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে তাঁর বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। গুলিতে আরো শহীদ হন যুবলীগ নেতা নুরুল হুদা বাবুল ও কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ক্ষেতমজুর নেতা আমিনুল হুদা টিটোও। নূর হোসেনের আত্মত্যাগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আরো বেগবান হয়।

শহীদ জেহাদ সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে এক অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে ঢাকার পল্টনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নাজির উদ্দিন জেহাদ একই সময়ে আরো শহীদ হন ঢাকা পলিটেকনিকের ছাত্র মনিরুজ্জামান রক্তঝরা ওই আন্দোলন ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠার। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে গিয়ে পুলিশের বুলেট নিজের বুকে বরণ করে নেন জেহাদ ও মনিরুজ্জামান ।শাহাদাত বরণ করেন এই অকুতোভয় ছাত্রনেতা তাদের রক্ত স্রোতের ধারা জোয়ারের বেগে বেগবান হয় স্বৈরাচারবিরোধী গণঅভ্যুত্থান ।

ডাঃ মিলন যিনি আসীম সাহসীকতা নিয়ে ১০ অক্টোবর শহীদ জেহাদের লাশ আন্দোলনরত ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়। ছাত্ররা লাশ নিয়ে অপরাজেয় বাংলার সামনে চলে যায়। এখানেই তখন স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটানোর শপথে গঠিত হয় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি। ২৭ নভেম্বর ১৯৯০ সেদিন মিলনের রিকশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পেছন দিয়ে যাওয়ার সময় (এখন যেটা মিলন চত্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর থেকে গুলি করে। একটা গুলি মিলনের বুকে এসে লাগে। স্বৈরাচারী সরকার ভেবেছিল নেতাকে মেরে আন্দোলন দমন করবে; কিন্তু ফল হলো উল্টো। মিলনের শহীদ হওয়ার খবর পৌঁছলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায় । সে রাতেই ধর্মঘট ডাকা হয় সংবাদপত্রে। পরদিন থেকে বন্ধ হয়ে গেল পত্রিকা বের হওয়া। ২৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গণহারে পদত্যাগ করেন। ৩০ নভেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য ২ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়। সে সুযোগে আন্দোলনের শহীদদের জন্য মসজিদে মসজিদে গায়েবানা জানাজার সময় মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিডিআর। সেদিন রামপুরা ওয়াপদা রোডে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় বাসায় ঢুকে বিডিআররা এক মাকে হত্যা করে। ১ ডিসেম্বর মিরপুরে মিছিলে বিডিআরের গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান পাঁচজন। কাজীপাড়ায় দুজন, ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে দুজন, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে সেনাবাহিনীর হাতে একজন, খুলনায় রিকশাচালক মহারাজ, নারায়ণগঞ্জে মণ্ডলপাড়ায় এক কিশোরসহ সারা দেশে আরো অসংখ্য মানুষ নিহত হন পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিডিআরের গুলিতে। ড. মিলন হত্যার পরে মাসে অর্থাৎ স্বাধীনতার বিজয়ের মাসের ২ তারিখে রাজধানীতে ছাত্ররা গণ আদালতে বিচার করেন স্বৈরাচার এরশাদের। গণ আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। একই সময় সচিবালয় সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রকাশ্য এরশাদের বিরুদ্ধাচারণ করে মিছিল বের করেন। গণহারে সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেন। এসময় রাজপথে টহলরত সেনা ও পুলিশের ভ্যান থেকে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনকারীদের দিকে হাত নেড়ে সমর্থন দিতে দেখা যায় বিভিন্নস্থানে। ৩ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনে এরশাদ শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। চার ডিসেম্বর এরশাদের ” শর্তসাপেক্ষ প্রস্তাব ” প্রত্যাখ্যান করে পথে নামে মানুষ। বিকেলে তিন জোটের সমাবেশ থেকে এরশাদকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর রাত ১০টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইংরেজি সংবাদে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর করেন জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এভবেই বাংলার মাটিতে জেনারেল এরশাদের দীর্ঘ নয় বছরের স্বৈরশাসনের আবসান হয় ।

কিন্তু যে আশা ও স্বপ্ন নিয়ে জাফর, জয়নাল , বাবুল , নুর হোসেন , জেহাদ বা ডাঃ মিলনদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সে আশা ও স্বপ্ন আদৌ কি পূরণ হয়েছে ? যে গনতন্ত্রের জন্য তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন সেই গনতন্ত্র আজো আমাদের কাছে মরিচিকা ।এরশাদের পতন ঘটিয়ে সংসদীয় ব্যবস্থার প্রচলন ছিল শাসক শ্রেণীর রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি সংস্কার মাত্র।এতে শাসক শ্রেণীর ক্ষমতার পোশাক বদল হয়েছে মাত্র কিন্তু আচরন আগের টাই আছে । একদিন যারা শপথ নিয়ে ছিল স্বৈরাচারী এরশাদের বিচার করার তারাই আজ সেই স্বৈরাচারকে ক্ষমতার অংশাদারিত্ব দিয়েছে । বিশ্বলুচ্চা, বিশ্ববেহায়া , পল্টি বন্ধু নানা উপাধিতে ভূষিত সেই স্বৈরাচারী এরশাদ কদর রাজনৈতিক ময়দানে সবচেয়ে বেশি এবং আমাদের শাসকগোষ্ঠি তার ই পদাংক আনুসরন করছেন । সংসদীয় ব্যবস্থা উন্মোচিত হয়েছে সংসদীয় স্বৈরতন্ত্র রূপে। আজ ছাত্র-যুবসমাজকে দেশপ্রেমিক, জাতি ও জনগণের সেবক হিসাবে গড়ে না তুলে, নৈতিক অবক্ষয়ের চরমে ঠেলে দেয়ার সবরকম আয়োজন চলছে। এ পরিস্থিতিতে উত্তরণের পথ ভোট বা সংস্কার নয় এ কথা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট। আজ কোটি কোটি বঞ্চিত জনগণের স্বপ্ন পুরণের পথ সুগম হয় নি জাতি আজো মুক্ত হতে পারেনি স্বৈরাচারে পেতআত্মা থেকে । তাই স্বৈরাচার পতনের রজত জয়ন্তিতে এসে জাফর, জয়নাল , বাবুল , নুর হোসেন , জেহাদ বা ডাঃ মিলনদের রক্তের ঋণ যাতে শোধ করতে পারি সেটাই হউক নতুন করে শপথ ।