জাতির কলঙ্ক মোচন ও ধনকুব যুদ্ধাপরাধীর আর্তনাথ !

আমাদের জাতিয় ইতিহাসে কলংকের দায় মুক্তির আরেক নতুন অধ্যায় রচিত হলো চট্রগ্রামের ডালিম হোটেলের কসাই খ্যাত মীর কাসেম আলী মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার মধ্যদিয়ে ।  বর্তমানে চলমান একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল কে নানা ভাবে বিতর্কিত করার জন্য অর্থিক ভাবে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী প্রভাব খাটিয়েছে তিনি ই মীর কাসেম আলী ।  সাম্প্রতি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপ কালে বলে ছিলেন তিনি নাকি মীর কাসেমের রিভিউয়ের রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন ।তার এই উদ্বিগ্নতাই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল মানুষের উদ্বেগ আর চিন্তাকে কয়েক গুন বারিয়ে দিয়েছিল । মীর কাসেমের রিভিউয়ের রায় নিয়ে আমার মত অনেকের মনেই অনেক প্রশ্নের ও জন্ম দিয়েছিল । অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটলো ৩০ আগস্ট মীর কাসেম আলী  মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ পিটিশন খারিজ হওয়ার মধ্যদিয়ে ।

 

আমাদের দেশে মীর জাফর কিংবা মীরকাসেমদের জন্ম বার বার হয়েছে । মীর জাফর কিংবা মীর কাসেমদের ষড়যন্ত্রকে জাতি রুখেদিয়েছে জীবনের বিনিময় রক্তের বিনিময় ষম্ভ্রমের বিনিময় । একাত্তর তথা আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতিয় জীবনে অহংকার আমাদের গৌরব আমাদের গর্ব । ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর আড়াই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনীময় অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা ।বার বার নানা ভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে  এমন কি লিপ্ত আছে একাত্তরের পরাজিত দেশী বিদেশী শক্তি । পচাত্তরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর থেকেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে চির স্হায়ীকরার জন্য প্রত্যেক সরকার ই একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে কাজে লাগিয়েছে । ঐ সকল সরকার গুলির পৃস্ঠপোষকতায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আড়ালে নিজেদের স্বাবলম্বি করতে স্বার্থক হয়েছে ।

 

অবশ্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি স্বাধীনতার পর থেকেই একাত্তরের পরাজিত ঘতকদের বিচারের ব্যাপারে ছিলেন সর্বদা জাগ্রত এর ই ফলশ্রুতিতে  শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃতে  ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে জনতার কাঠগড়ায় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের এক প্রতীকী ট্রায়েলের মাধ্যমে গোলাম আযমসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষনা দেন ।এর পর থেকেই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী আরো শক্ত হতে থাকে । যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে যারা শক্ত হাতে হালধরে গেছেন তাদের কে রাষ্ট্রীয় ভাবে ও নানা নির্যাতন নিপীড়নের স্বীকার হতে হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে ও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মাথায় নিয়েই ইন্তেকাল করতে হয়েছে ।

 

২০০৮ সালে যে  জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় হয়েছিল তার মূলেই ছিল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিক এজেন্ডাভুক্ত করা ।পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে ১৯৭৩ সালে প্রণীত ওয়ার্কক্রাইম ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের অধীনে একাত্তরের মানবতা বিরোধীদের বিচারের কার্যক্রম শুরু করে । পরে অবশ্য আইনটিকে কয়েকবার সংশোধন করে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা হয় যা বিশ্বের অন্যান্য দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে ব্যবহৃত আইনের চেয়ে ই অধিক চেয়ে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ।এই আইনের মাধ্যমেই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিমধ্যে কু-খ্যাত রাজাকার কাদের মোল্লা, নিজামী, কামারুজ্জামান, আলীম, গোলাম আযমের বিচার কার্যক্রম শেষ হয় ও রায় কার্যকর হয়। সর্বশেষ চট্রগ্রামের ডালিম হোটেলের কসাই খ্যাত মীর কাসেম আলীর রায় ও এখন শুধু মাত্র মাহামান্য রাষ্ট্রপতির ক্ষমা ভিক্ষার অপেক্ষায় ।

 

চট্রগ্রামের ডালিম হোটেলের কসাই খ্যাত মীর কাসেম আলী সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানলে ও নতুন করে আবার একটু জেনে নেই কে এই মীর কাসেম আলী আর কিভাবে ই বা তার উত্থান ? ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে মীর কাসেম আলীর উত্থান হয় শুরু হয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড গঠনের মাধ্যমে। যার প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এই মীর কাসেম । জামায়াতে ইসলামীকে শক্তিশালী আর্থিকভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে  অবশ্য  ১৯৭৭ সাল থেকে ই কাজ করে আসছেন মীর কাসেম। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী সারাদেশে বাঙালি নিধন শুরু করলে স্বাধীনতার লড়াইয়ে অস্ত্র হাতে নেয় এ দেশের মানুষ।আর তখন ই চট্টগ্রাম শহর শাখা ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন মীর কাসেম আলী সেই সূত্রে ছিলেন চট্টগ্রামে আল-বদর বাহিনীর ও নেতা। যদিও জন্ম গতভাবে মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার চালা গ্রামের বাসিন্দা মির কাসেম । বাবা  তৈয়ব আলীর কর্মক্ষেত্র চট্রগ্রাম হওয়ায় চট্রগ্রামেই বেড়ে উঠা তার । চট্টগ্রামের মানুষ তাকে চিনতো মিন্টু নামে।মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রামের ত্রাস কাসেম আলী রাজনৈতিক ও আর্থিক ক্ষেত্রে অসাধারণ ধূর্ততার স্বাক্ষর রেখে দ্রুত নিজের উন্নতি ঘটিয়েছেন।এমনকি ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন হওয়ার পর নাকি সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে আন্তর্জাতিক লবিস্ট ও নিয়োগ দিয়েছেন এই যুদ্ধাপরাধী ।২০১৩ সালের ২৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে তৎকালীন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন,মীর কাসেম আলী মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছেন। লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জামায়াতের চুক্তির কপি এবং টাকা  দেওয়ার রসিদ রয়েছে সরকারের কাছে।

 

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বদেশী বিরোধিতাকারীরা সাধারনত সেই সময় ধর্মের দোহায় দিয়েই বিরোধিতা করার চেষ্টা করছে অনেকেই আমাদের মাহান মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম যুদ্ধ বলে চালানোর চেষ্টা ও করেছিল যাতে করে আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ট সাধারন মুসলমানদের সমর্থন আদায় করা সহজ হয় । আমাদের মুক্তিকামী সাধারন মানুষের কাছে এর পরেও ঐ জানোয়ারেরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে নি । পরাজিত করতে পারেনি আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ।পচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ধর্ম ও বিত্তকে কাজে লাগিয়ে জন্ম দিয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ যা আজ আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আতংক । বঙ্গবন্ধু কণ্যা দ্বিতীয় বার সরকার গঠনের পর থেকে ই শুরু হয়েছে একাত্তরের মানবতা বিরোধী তথা  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যা জাতির দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতিক্ষার ই ফসল । এ বিচারের মাধ্যমে দল মত নির্বিশেষে সকল মানবতা বিরোধী তথা  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে এটা জাতির যেমন প্রত্যাশা তেমন ই  মানবতা বিরোধী তথা  যুদ্ধাপরাধীরা কিভাবে এত অর্থ বিত্তের অধিকারি হলো তা ও জাতি জানতে চায় সেই সাথে তাদের সমস্ত সম্পত্তি বায়জাপ্তের ও দাবি আজ সমগ্র জাতির । যদি  মানবতা বিরোধীদের আয়ের উৎস বের করা যায় এবং বাংলাদের মাটিতে তাদের রাজনীতি সম্পুর্ন ভাবে নিষিদ্ধ করা যায় তা হলে অবশ্যই এদেশ থেকে জঙ্গিবাদের ও মূল উৎপাটন করা সম্ভব ।

আর কত কাল আফসনাদের এভাবে মরতে হবে ?

তনু হত্যা দেশের প্রতিটি কোনেই আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল এর ই রেশ না কাটতে ই বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু খুন হলো ভোরের আলোয়ে চট্রগ্রামের রাজপথে । এই প্রত্যেকটি হত্যাকান্ডই সারা দেশ নানা ভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়েছে । হয়তো কোন অজানা কারনেই আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী এই দুটি হত্যাকন্ডের কোন টার ই কুলকিনারা  এখনো করতে পারেনি । এই হত্যাকান্ডগুলি নিয়ে নানা মুখে নানা কথা ভেসে বেড়াচ্ছে । এত আলোচনা সমালোচনা ও চাঞ্চলের পর নতুন চাঞ্চলের জন্ম দিয়েছে আফসানা ফেরদৌস মৃত্যু । আফসানা ফেরদৌস  রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী । সূদুর ঠাকুরগাঁও থেকে রাজধানী ঢাকায় এসেছিলেন লেখাপড়া করতে  লেখাপাড়ার পাশাপশি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে ও নাকি জড়িত ছিলেন  আফসানা ফেরদৌস ।ফেরদৌস আফসানার মৃত্যুর সঠিক কারণ নিয়ে জনমনে গভীর সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে অনেকের ই দাবি তাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে।তার এই হত্যাকান্ডের জন্য সন্দেহর তীর  ছাত্রলীগ তেজগাঁও কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনের দিকে । নিহত শিক্ষার্থী ফেরদৌস আফসানার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই একের পর এক টেলিফোন কলে আফসানার পরিবার কে  রবিনের পক্ষ থেকে তার বন্ধু স্বজনরা নানা ভাবে হুমকি দিয়ে আসছে । ফেরদৌস আফসানার মৃত্যুর ঘটনাকে কোন তদন্তের আগেই নাকি কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে আত্মহত্যা বলে চালানো অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও ফেরদৌস আফসানার পরিবার । তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো নানা বিতর্কের জন্ম নেয়ার পর ও আফসানার  মৃত্যুর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ফলাফল প্রকাশের আগেই তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ধরনের সন্দেহজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ মৃত্যুর সঠিক কারণ চিহ্নিত না করে কোনো লাশ দাফন করা কত টুকু বৈধ সেটাই জনমনে একটা বড় প্রশ্ন ?

 

একটি ক্ষেত্রে আফসানা ও  রবিনের পরিবার বক্তব্য প্রায় একই রকম উভয় পরিবার ই বললে আসছে দীর্ঘদিন যাবৎ আফসনা ও রবিনের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল । আর আফসনা মানিকদীর যে বাসায় ভাড়া থাকতেন ওখান কার সবাই জানতেন আফসনা বিবাহিত আর ছাত্রলীগ নেতা রবিন  ও নাকি স্বামী হিসেবেই সপ্তাহান্তে ঐ বাসায় যাতায়াত করতেন । আফসনা খুন হয়েছে না আত্মহত্যা করেছে সেটা প্রশ্ন নয় বড় প্রশ্ন হলো আফসানার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন মেধাবী ছাত্রীর অকালে জীবন শেষ করতে হয়েছে । যদি সে আত্মহত্যা করে থাকে তবে সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো কার প্ররোচনায় আকালে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো আফসনাকে ? সেই  প্ররোচনায়কারি অবশ্যই আইনের উর্দ্ধে নয় । তাই সেই  প্ররোচনায়কারিকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাড় করানো ই হবে আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহীনির দায়িত্ব । আর যদি সত্যি সত্যি ই আফসানা খুন হয়ে থাকে তা হলেতো আর কোন কথাই নেই । খুন ও খুনীর বিচার কি তা আমাদের সাবার ই জানা ।আমাদের  আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর ভাষ্য হলো আফসনার কথিত প্রেমিক অথাব স্বামী হাবিবুর রহমান রবিন নাকি তাদের চোখে ধূলা দিয়ে লাপাত্তা। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাহিরে রবিন এমন কোন মন্ত্র জানে না যার বলে হাওয়ায় মিশে যেতে পারবে রবিন ! যেহেতু আফসানার পরিবার সহ অনেকের ই দাবি আফসানার হত্যা বা আত্মহত্যার জন্য রবিন ই দায়ী তাই আমাদের আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর এই মুহুর্তে প্রথম কাজই হবে রবিনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন করে আফসানার মৃত্যু সঠিক কারণ দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা । তনু , মিতু বা আফসানা যেই হউক না কেন প্রতিটি হত্যা বা বির্তকিত মৃত্যুর  সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল রহস্য উন্মোচন করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠত হবে এমন টি ই স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের প্রত্যাশা । সব শেষে এমন ই একটা প্রশ্ন থেকে গেল আর কত কাল আফসনাদের এভাবে মরতে হবে ?

 

 

 

বঙ্গবাহাদুরের মৃত্যু ও আমাদের অক্ষমতা

বেশ কিছু দিন যাবৎ একটা হাতি ও বাগেরহাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক উৎপাদন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে ।  বাগের হাটের রামপালে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মানের প্রতিবাদে আজ সমগ্রজাতি প্রায় একত্রিত । রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের কাথায় যাওয়ার আগে আমি বলতে চাই ঐ হাতিটি কথা যেই হাতিটা গত ২৮ জুন ভারতের আসাম থেকে বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদ বেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে  প্রবেশ করে যাকে উপাধি দেয়া হয়েছিল ” বঙ্গ বাহাদুর ” । দীর্ঘ একমাস নদ নদী বালুচড় পেরিয়ে গত ২৭ জুলাই ” বঙ্গ বাহাদুর ” খেতাবে ভূসিত হাতিটি যখন ঢোকে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলায় এর পর ই হাতিটিকে বশে আনার জন্য তৎপর হয়ে উঠে প্রশাসন । হাতিটি উদ্ধারে জন্য ভারতের আসাম থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল ও এসেছিল বাংলাদেশে , তারা  কোন উপায়ন্ত না করতে পারে খালি হাতেই ফিরে যায় নিজ দেশে । এর পরের চেষ্টা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগগুলোর। আমাদের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মীরা বেশ কেয়েক দিন চেষ্টা করে বশে আনতে অর্থাৎ উদ্ধার করতে পারেনি হাতিটিকে । বরং তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে দায়িত্বে অবহেলা সহ ব্যর্থতার অভিযোগ । হাতিটি মারা যাবার পর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে স্হানীয়রা আভোযোগ ” বন বিভাগের লোকজন এসে হাতিটাকে মেরে ফেলছে ” । অবশ্য আমাদের বনবিভাগের কর্মীরা তাদের যোগ্যতা ও ক্ষমতা দিয়েই হাতিটিকে বসে আনার চেস্টা করেছেন বলেই আমার বিশ্বাস।নানা চেষ্টার পর  ১১ আগস্ট প্রথম বার হাতিটিকে ট্র্যাঙ্কুলাইজারগানের মাধ্যমে অচেতন করা সম্ভব হয়েছিল  সংশ্লিষ্ট কর্মীদের তবে প্রথমেই গলদ বাধে তাদের কাজে । ট্র্যাঙ্কুলাইজারগানের মাধ্যমে অচেতন ইনজেকশন পুশকরার বেশ কিছুক্ষণ পর হাতিটি পাশের এক ডোবায় নেমে পড়ে এবং জ্ঞান হারায়। তখন ভেটেরিনারি সার্জন গ্রামের মানুষদের ডাকেন হাতিটিকে উদ্ধার করার জন্য। গ্রামের সাধারন কয়েক শত মানুষ টেনে হেচরে ডাঙ্গায় তুলেন হাতিটিকে এর পর শিকল আর রশি দিয়ে গছের সঙ্গে বেঁধে ফেলেন হাতিটিকে । এর পর ধীরে ধীরে চেতনা ফিয়ে পেতে শুরু করে বঙ্গ বাহাদুর ।

 

১৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে শিকল ও দঁড়ি ছিঁড়ে ছুট দেয় বঙ্গ বাহাদুর  । বঙ্গ বাহাদুরে পিছনে পিছনে ও ছুটতে থাকেন বঙ্গ বাহাদুরকে উদ্ধারে কর্মীরা টানা দুই ঘন্টায় বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর  দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বঙ্গ বাহাদুরকে পুনরায় ট্র্যাঙ্কুলাইজারগানের মাধ্যমে অচেতন করতে সক্ষম হয়েছে উদ্ধারকারী দল। অচেতন হওয়ার পর থেকে সারা দিন কাদাময় খেতে খোলা আকাশের নিচে পড়ে ছিল বঙ্গ বাহাদুর।কয়েকবার চেতনানাশকের প্রয়োগে দূর্বল হয়ে পরে হাতিটি তার উপর  খাওয়াদাওয়াও হয়নি। দীর্ঘ ৪৯ দিনের পথচলায় হাতিটি হয়ে পরেছিল শারীরিক ভাবে দূর্বল এর সাথে বাংলাদেশের জনবসতির কাছাকাছি আসার পর থেকেই অত্যন্ত মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। হাতিটির শারিরীক দূর্বলতা কাটানোর জন্য নাকি বারো লিটারের মত স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল তাতে ও কাজ হয় নি শেষ পর্যন্ত আর সাফারি পার্কে ফিরে যাওয়া হলো না  বঙ্গ বাহাদুরের । একেবারেই না ফেরার দেশে যেত হলো তাকে । হাতি উদ্ধারের পুরো প্রক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে, এ ধরনের বন্য প্রাণীকে বাগে আনা বা তাকে বাঁচানোর মতো দক্ষতা আমাদের নেই। উদ্ধারকারীরা তাদের কাজে যথেষ্ট অবহেলা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন ।আর এই অবহেলা ও অদক্ষতার জন্যই জীবন দিতে হলো বঙ্গ বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত হাতিটিকে । হাতি আর সুন্দর বন একই সূত্রে গাঁথা । ভূচর প্রাণীদের মধ্যে হাতি ই সবচেয়ে বড় আর  সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি। এই বনভূমি গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র মোহনায় অবস্থিত এবং বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায়।আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর জন্য ই ভারত থেকে আসা ব্যবসায়িরা আমাদের সরকার কে সাথে নিয়ে সুন্দরবনের আতি নিকটে বাগেরহাট জেলার রামপালে নির্মান করতে যাচ্ছে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র । বিশেষজ্ঞদের অনেকের ই ধারনা রামপালে বিদ্যুৎউৎপাদন কেন্দ্র নির্মান হলে ধ্বংসের মুখো মুখি দাঁড়াবে আমাদের সুন্দরবন । সুন্দরবন রক্ষায় আমি ও বলতে চাই ভারত বা বাংলাদেশের যেখানেই হউক সুন্দরবনের পাশে কোথাও সুন্দরবন ধ্বংসকারী কোন স্হাপনা চাই না যা সুন্দরবন কে শেষ করে দিবে। যদি ও আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তি ও রামপাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মানের সাথে সংশ্লিষ্ট  রার রার ই বলে আসছে এতে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবেনা বা ক্ষতির মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখতে তারা সক্ষম । বঙ্গ বাহাদুরের মৃত্যু তাদের সেই সক্ষমতাকে নানা ভাবে নতুন করে প্রশ্নের সম্মুখিন করেছে । যেখানে আমাদের সরকার ও তার প্রশাসন ভারত থেকে পথ ভুলে আসা একটা হাতিকেই রক্ষা করতে ব্যর্থ সেখানে সুন্দরবনের অতিনিকটে নির্মিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিষাক্ত ছোবল থেকে কিভাবে সুন্দরবনকে রক্ষা করেবেন ? আমাদের সরকার ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের অবহেলার কারনে ভারত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রদত্ত হাতি রক্ষায় আমরা যেমন  ব্যর্থ হয়েছি ঠিক তেমনি ভারতীয় কোম্পানির সহযোগিতায় সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিতর্কিত বিদ্যুৎ উৎপান কেন্দ্র নির্মান হলে ও আমরা সুন্দর বন রক্ষায় পুরোপুরি ব্যর্থ হবো । ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের সুন্দরবন । বঙ্গ বাহাদুরের মৃত্যু আমাদের ব্যথিত করেছে কিন্তু সুন্দরবনের মৃত্যু আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে সেটাই ভেবে দেখার বিষয় ।

 

জঙ্গিবাদ নিয়ে অহেতুক বির্তক মোটেও কাম্য নয়

তর্কে বিতর্কে জর্জরিত বর্তমান সময়ের আমাদের দেশে অন্যতম সমস্যা ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিবাদ । বর্তমানে এটা আমাদের অলোচিত সমস্যা হলে ও কিন্তু এটা নতুন সমস্যা নয় । পুরোনো পণ্যের ই একটা নতুন মোড়ক । একেক সময় এই ধর্মীয় উগ্রবাদিরা একেক বেশ আর্বিভূত হয়েছে । কোন সাধারান ইস্যুতেই নানা ভাবে দেশে নানা অরাজগ পরিস্হিতির জন্ম দিয়ে এই ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদী জঙ্গিরা । দেশের কোন প্রগতিশীল মানুষ ই রক্ষা পাই নি ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিদের ছোবল থেকে যাকে যে ভাবে পেরেছে আঘাত করেছে । তাদের এই আঘাত থেকে বাঁচতে অনেক প্রগতি চিন্তার মানুষকে প্রিয় মাতৃভূমির মায়া ছেড়ে শুধু জীবন রক্ষার জন্য দেশান্তরি হতে হয়েছে আর যারা দেশান্তরি হতে ব্যর্থ হয়েছেন বা দেশে মায়া ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছেন তাদেরকে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয়েছে । ধর্মীয় উগ্র জঙ্গিরা আস্কারা পেয়েই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলার সাহস যুগিয়েছে । রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা কে অনেকেই  জিম্মি ঘটনা  বলে আখ্যায়িত করেছেন  । যারা এই মামলা জিম্মি সংকট  হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন  স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করতে চাই কোন দৃষ্টিতে আমরা এই হামলাকে জিম্মি সংকট হিসেবে মেনে নিব । কোন গোষ্ঠি বা দল সাধারন মানুষকে জিম্মি করে তাদের কিছু দাবী দাওয়া বা শর্ত পূরনের জন্য ।

 

গুলশান হামলায় জঙ্গিদের কোন নির্দিষ্ট দাবী দাওয়া বা শর্ত ছিল না । যদিও কিছু গুজব বাতাসে ভেসে বেড়িয়েছে কিন্তু আমরা এর কোন সত্যতা পাই নি । তাই এই হামলায় অংশগ্রহনকারী জঙ্গিরা শুধুই ছিল হামলাকারী তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কিছু নিড়ীহ মানুষকে বিশেষ করে বিদেশী নাগরিকদের খুন করে দেশে এক বিশৃংখল  অবস্হা সৃষ্টি করে  পালিয়ে যাওয়া । তারা সাধারন মানুষদের বর্বর ভাবে খুন করতে পেরেছিল ঠিক ই তবে পালানোর পথ আর তারা বের করতে পারেনি । তবে নাটের গুরুরা এখনো রয়ে গেছে ধরাছোয়ার বাহিরে । যদি ও গুলশান  হামলায় সেদিন জীবিত উদ্ধার হওয়া হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে । হাসনাত নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবেক শিক্ষক জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের পৃষ্টপোষকতার অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষককে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে  ।তাহমিদ হাসিব খান কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং কানাডার নাগরিক গুলশান হামলার দিনই দুপুরে ঢাকায় আসেন তাহমিদ।  হাসনাত ও তাহমিদ কে নিয়ে বেশ কয়েকদিন যাবৎ বিভিন্ন সোস্যেল মিডিয়ায় বিতর্কের বন্যা বইছে ইতোমধ্যে কানাডা থেকে  ” ফ্রী তাহমিদ ” নামে একটি মিডিয়া ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন । এই ক্যাম্পেইন  মাধ্যমে তারা  তাহমিদ কে নির্দোষ প্রমানে জন্য নানা অপচেষ্টার মাধ্যমে দেশের ভিতর লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের কে পরোক্ষভাবে উৎসাহিত করছে বলেই আমার ধারনা ।  হাসনাত বা তাহমিদ কোন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য কি না বা তারা গুলশান হামলার সঙ্গে জড়িত কিনা সেটা নিয়ে আমি বিতর্কে যাবো না যেহেতু তারা আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহীনির কব্জায় আছেন তদন্ত ঠিক ভাবে চললে অবশ্যই  আমাদের আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহীনি সেটা বের করতে সক্ষম হবেন ।

 

গুলশান হামলার পর বিভিন্ন মিডিয়ায় হাসনাত ও তাহমিদের যে সব ছবি ও ভিডিও চিত্র প্রকাশ হয়েছে তাতে আমাকে দারুন ভাবে বিশ্মিত করেছে মনের ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে নানা প্রশ্নের  । তাহমিদকে যেভাবে  অস্ত্র নিয়ে নাড়া চারা করতে দেখেছি আর হাসনাতকে নিহত জঙ্গিদের সাথে ধুমপানরত অবস্হায় হাটা চলা করতে দেখেছি তাতে আমার কাছে মনে হয়েছে নিহত জঙ্গিদের সাথে তাদের যে একটা বিশেষ সম্পর্ক হয়তো ছিল । এমনকি শোনাগেছে ঐ রাতে এত গুলি মরদেহ সামনে রেখে নিজের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে ও নাকি আত্ম তৃপ্তি নিয়ে্ই সেহেরি খেয়ে ছিল হাসনাত ও তার পরিবার ?  গুলশান হামলার জঙ্গিরা নাকি বলে ছিল  মুসলমান আর বাংলাদেশি হলে ওরা মারবে না ? অথচ ওদের হতা থেকে কিন্তু ফারাজ, ইসরাত আর আম্বিতা ও রক্ষা পায় নি । এমন ও গুজব শুনা গেছে ফারাজরা নকি বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহনের কারনে তাদের হত্যা করা হয়েছে । স্বাভাবিক ভাবে ই প্রশ্ন আসে হাসনাত ও তাহমিদের ও তো বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়া তবে এমন কি কর্মের জন্য জঙ্গিরা তাদের রেহায় দিল ? ঐ সমালায় নিহত ফারাজকে নিয়ে অবশ্য আমাদের কিছু মিডিয়া তদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য নোংড়া বিতর্কে লিপ্ত ছিল । তাদের দেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম মূল সমস্যা ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ এ নিয়ে কোন নোংড়া বির্তক বা সমালোচনার জন্ম হউক যে বিতর্ক বা সমালোচনা ধর্মীয় উগ্রবাদ তথা জঙ্গিবাদকে শক্তি যোগাতে সহযোগিতা করবে ।

 

আমাদের কে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে জঙ্গিবাদ এটা কোন সাধারন সমস্যা নয় এমন কি এটা কোন রাজনৈতিক সমস্যা ও নয় যে এটা নিয়ে বিতর্ক তুললে এর গতি ধারা বা পথ পরিবর্তন করা যাবে । আমাদের সরকার ও তার প্রশাসনেরও খেলায় রাখতে হবে জঙ্গিবাদের মত জীবন মরন ইস্যুতে তাদের কর্মকান্ডে  কোন নাটকীয়তার জন্ম না দেয় । জঙ্গিবাদ সম্পর্কিত যে কোন ঘটনাই তারা দেশ বাসীর কাছে স্বচ্ছ ভাবে উপস্হপন করবে যাতে দেশের সাধারন মানুষের মনের ভিতর জঙ্গিবাদ ইস্যু নিয়ে বিন্দু মাত্র বিতর্কিত প্রশ্নের জন্ম না নেয় । তাহলেই সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে উগ্রধর্মীয় জঙ্গিবাদ কে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব ।

হতাশা ও প্রত্যাশার বিএনপির নতুন কমিটি

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের চার মাস ১৬ দিন পর ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছে বিএনপি।অনেক মতে বর্তমান বিএনপির এত বড় কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, দলটির রাজনৈতিক একটি বড় কমেডি ও বটে । অথচ এত বিশাল আকারের কমিটি দিয়ে ও স্বস্তিতে নেই দলটির নিতীনির্ধারকরা বরং পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে মহা বেকায়দায় আছে বিএনপি হইকমান্ড ।প্রথম দিনেই ২ জন নেতার কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষনায় দলের ভিতর এক চরম অস্হিরতার জন্ম দিয়েছে ।বিশেষ করে মোসাদ্দেক আলী ফালুর পদত্যাগ । প্রত্যাশা অনুযায়ি পদ না পাওয়া দলের ভিতরে চলছে নানা তোড়পাল অনেক নেতারা ই নাকি আবার ফালুর পথেই এগুতে যাচ্ছেন তাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনার পর থেকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এই রাজনৈতিক দলের ভিতরে কেমন জানি একটা অস্হিরতা বিরাজ করছে ।বাজতে শুরু করেছে ভাঙ্গের সুর । বিএনপির অনেক অবহেলিত পদ বঞ্চিত নেতার ই মন্তব্য যেই ফালু সাহেব জিরো থেকে হিরো হয়েছেন শুধু মাত্র বিএনপি আর বেগম খালেদা জিয়ার আশীর্বাদে তিনি ই যদি পদ ছেড়ে দল থেকে দূড়ে সরে যেতে পারেন তা হলে আমরা কেন খলি মাটি কামড় দিয়ে পরে থাকবো ।

১৯ মার্চ, ২০১৬ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর থেকে দেশবাসীর মনের ভিতর নানা জল্পনা কল্পনা চলে আসছিল । আমাদের অনেকের ই ধারনা ছিল বিএনপি হয়তো এবার আমাদের রাজনীতির প্রচলিত ধারা বাহিরে আসছে সক্ষম হবে । তাদের দলের রাজনীতিতে হয়তো অনেক চমক দেখা যাবে দেখা যাবে পরিবর্তন ও কিন্তু এবার ও বিএনপি আমাদের সেই প্রত্যাশ পূরনে ব্যর্থ হলো । এবারের কমিটি ও পরিবার তন্ত্রের শিকল থেকে বের হয়ে আসতে পারে নি । যোগ্যতার ভিত্তিতে নয় শুধু মাত্র পারিবারিক প্রভাবের কারনেই হয়তো আফরোজা আব্বাস , খন্দকার মারুফ হোসেন বা অর্পণা রায় রা বাগিয়ে নিয়েছেন দলের বড় বড় পদ । এই জন্যই হয়তো নতুন কমিটিতে সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের অভিযোগ আজ চরমে পৌছেছে । এই অভিযোগ তুলেই কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান । শামীমুর রহমানের মতে আমি পাঁচ মাসের বেশি সময় জেলে ছিলাম। দৈনিক ষোল ঘণ্টা রাজনীতি করেছি। ছিলাম সহদপ্তর। এখন আরও নিচের পদে সহপ্রচার করা হয়েছে। আমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাই, মহাসচিব বরাবর চিঠি দিয়ে নিজের নাম প্রত্যাহার চেয়েছি।প্রত্যাশ অনুযায়ী পদবঞ্চিত অনেক সিনিয়ার নেতাই আজ চরম হতাশার মধ্যে সময় পার করছেন । অনেকের ই মন্তব্য এখন ও যদি কমিটি পূঃর্ন গঠন না করা হয় তা হয় তা হলে খুব শীঘ্রই কেন্দ্র থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতা কর্মীদের দল থেকে পদত্যাগের হিরিক পড়ে যাবে । তখন দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাড়াবে ।

বিএনপির এবারের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একটি মজার পদ হলো সম্পাদক (বিশেষ দায়িত্বে) । আমি মজার বলতে বাধ্য হলাম এই কারনে যে বিএনপি গঠনতন্ত্রে আদৌ এমন পদ আছে বলে আমার জানা নেই । তার পর ও তারা গঠনতন্ত্রর বিরোধী এমন একট পদ সৃষ্টি করে খুশী করতে চেয়েছেন দলের ত্যাগী নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও আবু নাসের মুহাম্মদ ইয়াহিয়া কে । বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল ( বিএনপি ) জন্মলগ্ন থেকে ই তাদের বিরুদ্ধে আমাদের মাহান মুক্তি যুদ্ধের বিরোধীতাকারিদের আশ্রয় – প্রশ্রয় দেয়ার আভিযো আছে । যদি অভিযোগ বলি তবে আমার ও ভুল হবে বরাবরই তারা মহান মুক্তি যুদ্ধের বিরোধীতাকারিদের সহযোগি হিসেবে কাজ করে আসছে এমন কি যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতার অংশীদার ও করেছেন । হয়তো ভেবে ছিলাম দলটির কাছ থেকে এবার কিছুটা হলেও সু-আক্কেলের পরিচয় পাবো কিন্তু আমাদের সে আশায় শুধু গুড়ে বালি । তাদের নির্বাহী কমিটিতে এবার স্হান করে নিয়েছেন একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ও মৃত্যুদন্ড কর্যকারী আসামী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরির ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরি একই পরিবারের গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরি আরো আছেন আজীবন সাজা দন্ডে দন্ডিত আসামী আব্দুল আলীমের ছেলে ফয়সাল আলীম ।হয়তো অনেকে বলবেন হুম্মাম কাদের বা ফয়সাল আলীমের পূর্বপুরুষরা তো অপরাধী তাদের জন্য কি এর দায় ভার এদের ও নিতে হবে ? যাদি ও আমি তেমন টি বলছি না তার পর ও কিন্তু হুম্মাম কাদেররা তাদের পূর্বপুরুষের কৃতকর্মের জন্য মোটে ও অনুশোননা দেখায় নি বরং প্রতিশোধের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছেন ।বিএনপির অনেক নেতার ই অভিযোগ নতুন ঘোষিত কমিটিতে ও নাকি জামাত পছন্দের অনেককেই বড় বড় পদ দেয়া হয়েছে ।

প্রথা অনুসারে বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পর দিন পদ পাওয়া নেতারা শেরে বাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত: রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। কিন্তু এবার এত বড় কমিটি গঠনের পরও এখন পর্যন্ত নতুন নেতারা জিয়ার মাজারে যাননি। এতেই নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা পর বিএনপির অভ্যন্তরিন অবস্হা বাহির থেকে কিছুটা আচ করা যায় ।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ( বিএনপি ) বেশ কয়েকবার যেমন রাষ্ট্র পরিচালনার ভার গ্রহন করেছে তেমনি সংসদে প্রধান বিরোধীদলের দায়িত্ব ও পালন করেছে । এই বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের দিকে চেয়ে আছে সমগ্র জাতি এবং তাদের কর্মকান্ডের উপর অনেকটাই ভিত্তি করে জাতির ভবিষ্যৎ । তাই একটি গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির নিকট আমাদের তথা জাতির প্রত্যাশা তারা তাদের দলের ভিতর সুষ্ঠ গনতান্ত্রিক ধারা বজায় রেখে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের দেশে সুষ্ঠ গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারা বজায় রাখবে ।

 

ভুলে গেলে চলবে না

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর থেকে আমাদের আলোচনার মূলেই এখন শুধুই জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান । যদি ও আমাদের অনেকেই জঙ্গিবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ লিখে আসছেন বলে আছেন তাদের কথা কারো কানে পৌছেছে বলে আমার মনে হয় নাই। তাদের কথা আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিদের কানে যদি পৌছতে ই পারতো তা হলে হয়তো জঙ্গিবাদ নামক রাহুর কবলে সমগ্র জাতিকে পরতে হতোনা । জঙ্গিবাদের আলোচনায় আমারা এখন ভুলতে বসেছি অনেক সমস্যাই ভুলতে বসেছি আমাদের সদ্য অতীত হওয়া অনেক আলোচিত ঘটনা ই । যেমন ধরি কেন্দ্রীয় ব্যংকের রিজার্ভ চূরির ঘটনা , তনু হত্যার কথা ও প্রায় ভুলে ই গেছি ,পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার কথা ই বা কয়জনের মনে আছে । বানের জলে আজ যে মানুষ গুলি ঘড় ছাড়া আমরা কজন ই বা তাদের কথা বলছি ।

আমরা যাই বলি না কেন আর যাই ভাবি না কে ফিলিপাইনের সরকার কিন্তু আমাদের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনা মোটে ও ভুলে যায় নি। সাম্প্রতি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনকে ২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার জরিমানা করার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।দেশটির কোনো ব্যাংকের উপর “নজরদারিমূলক জরিমানার পদক্ষেপ ” হিসেবে এটাই সবচেয়ে বড় অঙ্ক বলে জানা গেছে । এমন কি ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতেরতে রিজার্ভের চুরি যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস ও দিয়েছেন। এই জন্য ফিলিপাইনের সরকার ও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য । রিজার্ভের চুরি যাওয়া টাকা নিয়ে আমাদের সরকার ও আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতটা চিন্তিত সেটা ই একটা বড় প্রশ্ন ? কিছু দিন আগে অবশ্য আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী এ নিয়ে কিছুটা খোলসা করবেন বলে জানিয়েছিলেন সংসদকে যদি ও সেটা আর তার পক্ষে সম্ভব হয় নি ।

সোহাগী জাহান তনু কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও সাংস্কৃতিক কর্মী গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে পাওয়া যায় তার লাশ।তনু হত্যা নিয়ে ফুঁসে উঠেছিল সমগ্র জাতি তবে ঐ ফুঁসে উঠাটা ছিল মাত্র ক্ষনিকের জন্য । তনু হত্যার মামলার বর্তমান কি অবস্হা তা হয়তো আমাদের অনেকের ই জানা নেই । ক্ষনিকের জন্য রাজপথ থেকে অলি গলি প্রকম্পতি হলে ও তনু হত্যার শোক আজ শুধু তনুর বাবা মার বুকেই সীমাবদ্ধ । অতি সম্প্রতি সদ্য বিদায়ী জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তনু হত্যা মামলা নিয়ে আমাদের যে কথা শুনিয়েছে তাতে আমরা অনেকটা ই হতাশ হয়েছি এমন কি অবাক ও হয়েছি । ড. মিজানুর রহমান বলেছেন তনু হত্যা মামলায় একটি বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কথা বলার ক্ষেত্রে ‘বাড়াবাড়ি’ না করতে তাকে পরামর্শ দিয়েছিল । যদিও ড. মিজানুর ‘বাড়াবাড়ি’ না করার কথাকে পরামর্শ হিসেবে উপস্হাপন করে নিজের ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন সত্যিকারেই কি আমরা এটাকে পরামর্শ হিসেবে নিব না কোন বিশেষ বাহিনীর হুমকি হিসেবে ভাববো ?

পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার পর সারাদেশে শোকের ছায়া বইছিল । জঙ্গিদমনে বাবুল আক্তার যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয় তাই তার স্ত্রীর খুন আমাদের দেশের মানুষ সাধারন ভাবে মেনে নিতে পারে নি । এই হত্যার প্রতিবাদ উঠেছে দেশের সমগ্র কোনা থেকেই । এর পর এ হত্যার ঘটনা নিয়ে আমরা কতই না নাটক দেখলাম । অনেক দিন নিখোঁজ থাকার পর বাবুল আক্তার আবার তার কর্মস্হলে ফিরে এসেছেন তবে দুঃখের বিষয় হলো মিতুর হত্যাকাণ্ডের সময় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায় তাদের সাতবছর বয়সী ছেলে মাহির মাহমুদ । প্রাণ বাঁচলেও এরই মধ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে মাহির মাহমুদের।মাহির মাহমুদ কিছুটা শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছে। মাহির আচার-আচরণও অনেকটা অস্বাভাবিক হয়ে গেছে। মায়ের সাথে সাথে শ্রবণ শক্তি ও নাকি হারাচ্ছে মাহির মাহমুদ।

আজ প্রায় সারাদেশই বানের জলে ভাসছে বিশেষ করে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের জেলা গুলি ।সেখানে অনাহারে অর্ধাহারে দিন যাবন করছে অগনিত মানুষ ।উত্তরাঞ্চলের মানুষ গুলি এভাবেই মঙ্গাপিড়ীত এই মৌসুমে কর্মশূন্য থাকেন অধিকাংশ মানুষ এর উপর ভায়াল বন্যা এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা । আমাদের প্রত্যাশা একটি মানুষ ও বানের জলে ভেসে যাবে না । ক্ষুধা নিয়ে একটি মানুষ ও যাতে দিন যাপন না করে । চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ আমাদের পুরোটাই আমাদের গড়ে ফিরে আসবে ।তনু আর মিতুদের হত্যার ন্যায় বিচার হবে ।আর কোন মাহির মাহমুদ যেন মাতৃহারা না হয় আর কোন মাহির মাহমুদ যেন শ্রবণ শক্তি কোন ইয়ার হোসেন যেন সন্তান হত্যার বিচারের জন্য আহাজারি করতে না হয় । গুলশান বা শোলাকিয়ার মত ঘটনা আর যেন বাংলার মাটিতে না ঘটে । জঙ্গিবাদসহ সকল আপশক্তির কালো ছায়া থেকে নিরাপদ থাকুক আমার আপনার প্রিয় বাংলাদেশ ।